সাতসতেরো

শেফালী ফুল যেভাবে ঝরে পড়ে || আদিত্য আনাম

০১.

মা একটি রান্নাঘর। তার সারা-মুখ আর সারা-বুক ধোঁয়া ধোঁয়া। মা একটি মাংসের যন্ত্র; তার কোনো ক্লান্তি নেই এবং আমরা তার উৎপাদিত বিষাদ।

০২.

বাবা নুন আনতে গিয়ে সমুদ্রে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর মা পান্তার পাতিলে ডুব দিয়ে ভাতের সাথে নিজেকে তুলে এনে আমাদের পাতে বেরে দিতেন আমরা এতটাই ক্ষুধার্ত ছিলাম যে,  অনায়াসে ভাতের সাথে খেয়ে ফেলতাম  মাকে।

তবে কি আমরা-ই সেই গাছখেকো ফল? যাদের নিয়তিজুড়ে অভিশাপের সাপে  কামড়ানো ক্ষত আর দু-চোখে বিষাক্ত জল!

০৩.

একটি উপযুক্ত আকাশের অভাবে  মা কখনো পাখি হতে পারেনি, তবে বাবা হয়েছিলো শতবার। মা কেবল শিউলীফুল হয়ে ঝরেছিলো বিছানায়।

বালিশে জমানো দুঃখ তার ঠোঁটের পালিশে  নালিশ হয়ে ফুটেছে বহুবার বাবা ঠোঁটের ভাষা আজও শিখতে পারেনি দক্ষতায়। মা হেমন্তের হিমবাতাস হয়ে বইতে পারেনি কখনো কেননা বাবা ঔরস্যের দরজায় স্থির দাঁড়িয়ে ছিলো চিরকাল। মার চোখে জোছনার প্লাবন বইতো  আর সেই প্লাবনে সে ডুবে যেত একাই বাবা সাঁতার কাটতে পারেনি উপযুক্ত সাঁতার শেখার অভাবে। মার ইচ্ছেগুলো তাই আক্ষেপের আকাশ পথে মর্মাহত যাত্রী।

০৪.

মা'র কবরে দাঁড়িয়ে মাকে শুইয়ে দিয়ে কবর থেকে উঠে আসার সময় একমুহূর্ত মনে হল পৃথিবীতে আসার সময় যে আমার জন্য একদিন দরজা খুলে দিয়েছিল, আজ তাকে আমি পৃথিবীর বাইরে রেখে যাচ্ছি।