বিনোদন

মানুষ শুধু চাকচিক্য দেখে, আড়ালের কষ্টটা বোঝে না: মালাইকা

বলিউড অভিনেত্রী মালাইকা আরোরা। শুধু আইটেম গানে কাজ করেই নিজেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেছেন। বলিউডে আইটেম গানের আদর্শও বলা হয় তাকে। তাইতো আইটেম গানের কথা আসলেই চোখে পড়ে ‘মুন্নি বদনাম হুয়ি’ কিংবা ‘ছাইয়া ছাইয়া গান’ দুইটি। 

একান্ন বছরের মালাইকার শরীরি সৌন্দর্যে এখনো বুঁদ নেটিজেনরা। তাছাড়া ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বছরজুড়েই আলোচনায় থাকেন এই অভিনেত্রী। মালাইকার চাকচিক্যময় জীবন নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রশ্নও উঠেছে। কিন্তু তার সত্যিকারের জীবন এতটা সহজ নয়, কখনো ছিলও না। কারণ অনেক সংগ্রাম করে আজকের অবস্থান তৈরি করেছেন এই অভিনেত্রী। পিঙ্কভিলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই সংগ্রামের গল্প শুনিয়েছেন মালাইকা।

সিঙ্গেল মায়ের কাছে বড় হয়েছেন মালাইকা আরোরা। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমার মা চাকরি করতেন, যার কারণে আমাকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হয়। খুব ছোট বয়সেই এমন এক অবস্থায় পড়ি, যেখানে আমার দায়িত্ব নিতে হয়েছে।”

ছোট বোন অমৃতা আরোরারও যত্ন নিতেন কিশোরী মালাইকা। তার ভাষায়—“আমি আমার বোনেরও (অমৃতা আরোরা) যত্ন নিতাম এবং সময়ের আগেই দায়িত্বশীল হয়ে ওঠি।”

মাত্র ১৭ বছর বয়সে মালাইকা উপার্জন শুরু করেন। তখন তার মনোযোগ ছিল কেবল উপার্জন, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে। সিঙ্গেল মায়ের কাছে বড় হওয়ার কারণে কি এটা করতে হয়েছে? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে মালাইকা বলেন, “সম্ভবত। আমার মনে হয়, তখন কিছু অনিরাপত্তা তৈরি হয়েছিল।”

মায়ের সংগ্রামের কথা স্মরণ করে মালাইকা আরোরা বলেন, “আমাদের কোনো কিছুর অভাব ছিল না। তবে মা অনেক কষ্ট করে আমাদের সবকিছু দিয়েছেন। শিক্ষা, খাবার, জামাকাপড়—যা প্রয়োজন সবই দিয়েছেন। মা কখনো বলেননি, ‘তুমি এটা পাবে না’। যত কঠিনই হোক না কেন, তিনি সব একাই সামলেছেন। কাজ করেছেন, আমাদের বড় করেছেন, স্কুল-কলেজে পড়িয়েছেন—সবকিছু করেছেন।”

ব্যক্তিগত জীবনে মায়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। তা স্মরণ করে মালাইকা আরোরা বলেন, “আমি মনে করি, সেই দৃঢ়তা, সংকল্প বা শক্তি আমি তার কাছ থেকেই পেয়েছি। আমি তার জীবন দেখে বড় হয়েছি এবং সেই শিক্ষা আমার মধ্যে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে।”

বাস্তব পরিস্থিতির কারণে মালাইকা প্রায়ই অনুভব করতেন, তাকে আরো বেশি কিছু করতে হবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি এমন একজন মেয়ে হতে চেয়েছিলাম, যার ওপর সবাই ভরসা করতে পারেন।”

কঠিন এই জীবনের জার্নিতে কখনো ক্লান্ত অনুভব করেছেন কি না? জবাবে মালাইকা আরোরা বলেন, “হ্যাঁ, এমন সময় এসেছে যখন মনে হয়েছে একটু বিশ্রাম নিই। কিন্তু আবার মনে হয়েছে, আমার দায়িত্ব আছে।” 

আজ আর কাজ করবেন না, এমন বিলাসিতা কখনো দেখান না মালাইকা। তার মতে—“আমি বসে থেকে বলতে পারি না—‘আরে, আজ কাজ করব না।’ এমন বিলাসিতা আমার নেই।”

মালাইকার পৈতৃক কোনো সম্পত্তি নেই, তাই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তার জীবনযাপন নিয়ে মানুষের মন্তব্য তাকে হতাশ করে। মালাইকা বলেন, “অনেকেই আমার জীবনযাপন নিয়ে মন্তব্য করেন। কিন্তু তারা বোঝেন না এই জীবনধারা বজায় রাখতে, একটি পরিবার চালাতে, সব কিছু ঠিকঠাক রাখতে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। মানুষ শুধু চাকচিক্য দেখে। কিন্তু এর পেছনের কষ্টটা বোঝে না।”

মালাইকার বাবার নাম অনিল আরোরা, মায়ের নাম জয়েস পলিকার্প। অনিল-জয়েস দম্পতির দুই সন্তান। তারা হলেন—মালাইকা আরোরা ও অমৃতা আরোরা। মালাইকার বয়স যখন ১১ বছর তখন তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তবে পরবর্তীতে অনীল কুলদীপ মেহতাকে বিয়ে করেন মালাইকার মা। গত বছরের শেষের দিকে আত্মহত্যা করেন মালাইকার সৎবাবা অনিল কুলদীপ। 

১৯৯৮ সালে আরবাজ খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মালাইকা আরোরা। ২০১৬ সালে দীর্ঘ ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানতে আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন এই দম্পতি। ২০১৭ সালের মে মাসে তাদের বিচ্ছেদ মঞ্জুর করেন মুম্বাইয়ের বান্দ্রার পারিবারিক আদালত। মালাইকা-আরবাজের আরহান খান নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। এরপর আর বিয়ে করেননি মালাইকা।