মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ঘাট এলাকার পদ্মা ও যমুনা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তীব্র স্রোত ও পানি বৃদ্ধির কারণে নদী তীরবর্তী শতাধিক বাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
গত পাঁচদিনে অন্তত ৫-৬টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা ঘাট কার্যালয় জানিয়েছে, ভাঙনের মুখে থাকা পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাট গত রবিবার (১৭ আগস্ট) সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ভাঙনরোধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, স্থায়ী সমাধানের জন্য শুধু আশ্বাস নয়; কার্যকর ও তৎক্ষণিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
গত শনিবার (১৬ আগস্ট) রাতে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাট এলাকার উত্তম পাল, গোপী দাস, রমজান আলী ও ছালালের বাড়ি নদীতে বিলীন হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত উত্তম পাল বলেন, “আমার ঘরে নগদ প্রায় দুই লাখ টাকা, প্রায় এক ভরি স্বর্ণ ও আসবাবপত্র ছিল। সবই নদীতে হারিয়ে গেছে।”
মুরগির খামার ও বাড়ি নদীতে বিলীন হওয়া গোপী দাস বলেন, “পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে পেরেছি, কিন্তু কোনো সম্পদ রক্ষা করতে পারিনি।”
নদী ভাঙনের তীব্রতা ও প্রশাসনের স্থবিরতায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা গত রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন। ফলে ঘাট এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তির শিকার হন। সেনাবাহিনী গিয়ে এলাকাবাসীর দাবির কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা সড়ক ছাড়েন।
মানববন্ধন ও সমাবেশেও স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা বক্তব্য দেন। উপজেলা শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম তুষারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- আরুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল হালিম মল্লিক, সহ-সভাপতি নেয়াজ মুন্সী, রঞ্জু শেখ, আব্দুল ছাত্তার, ওয়াসিম শেখ। তারা দ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সমাবেশে এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, পাটুরিয়ার আশপাশে অবৈধভাবে বালু-মাটি কেটে বাণিজ্য চালানোর কারণে নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের আশপাশে অন্তত পাঁচটি স্থানে অবৈধ বালুর চাতাল রয়েছে। সরকারি জায়গা দখল করে এক্সক্যাভেটর ব্যবহার করে বালু-মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাজী মো. আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, “আমার ইউনিয়নের রাস্তা ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এতে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং লঞ্চে যাত্রী ওঠানামায় ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের পানি পদ্মা-যমুনার স্রোত আরো তীব্র করছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পুরো ফেরিঘাট ধসে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
ফরিদপুরগামী যাত্রী তৌফিক আলম বলেন, “২০০২ সালে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় ফেরি ঘাট স্থানান্তর করে। এতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগ সহজ হয়। পাটুরিয়া ঘাট ধ্বংস হলে এই গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে তীব্র সমস্যা সৃষ্টি হবে।”
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা ঘাট কার্যালয় জানিয়েছে, পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটও ভাঙনের মুখে। এই ঘাট রবিবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। অন্য তিনটি ঘাটও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে মাত্র ১১টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) বিআইডব্লিটিসি আরিচা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত জিএম আব্দুস সালাম বলেন, “নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে ঘাট এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘাটে ধস হলে পন্টুন রাখা সম্ভব হবে না এবং ফেরি চলাচল বন্ধ হতে পারে।”
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, “পাটুরিয়া ঘাট ও লঞ্চ ঘাটগুলো বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক পরিচালিত। যদি আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়, আমরা কারিগরি সহায়তা ও ভাঙনরোধে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”
বিআইডব্লিউটিএ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, “জিও-ব্যাগ ব্যবহার করে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হচ্ছে, তবে পর্যাপ্ত জিও-ব্যাগের অভাব রয়েছে।”
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, “ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”