রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে তালিকায় নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থী ও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
১৭টি আবাসিক হলের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাকসুর এই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় মোট ভোটার ২৪ হাজার ৮৯২ জন, এর মধ্যে ছাত্র ১৫ হাজার ১৫১ জন এবং ছাত্রী ৯ হাজার ৭৪১ জন।
তালিকা অনুযায়ী ছাত্র ভোটারদের মধ্যে শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলে ৮২৮ জন, শাহ মখদুম হলে ১ হাজার ১৭০ জন, নওয়াব আব্দুল লতিফ হলে ৯৬০ জন, সৈয়দ আমীর আলী হলে ১ হাজার ২৯ জন, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ১ হাজার ৮৮ জন, শহীদ হবিবুর রহমান হলে ২ হাজার ৮৮ জন, মতিহার হলে ১ হাজার ৫৮৩ জন, মাদার বখশ হলে ১ হাজার ৫৯০ জন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ১ হাজার ৫৬১ জন, শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ১ হাজার ৯৭১ জন এবং বিজয়-২৪ হলে ১ হাজার ২৮৩ জন রয়েছে।
আর ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে মন্নুজান হলে ২ হাজার ৩৫ জন, রোকেয়া হলে ১ হাজার ৮২২ জন, তাপসী রাবেয়া হলে ১ হাজার ৪৭ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১ হাজার ১৩৪ জন, রহমতুন্নেসা হলে ১ হাজার ৫৫৫ জন এবং জুলাই-৩৬ হলে ২ হাজার ১৪৭ জন রয়েছেন।
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা রাকসুর ওয়েবসাইট এবং আবাসিক হলগুলোর নোটিশ বোর্ডে পাওয়া যাবে।
এদিকে, চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থী ও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নাম নেই। ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়া এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় ভোটার তালিকায় তারা অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে, গত ১৩ আগস্ট ভর্তি কার্যক্রম সমাপ্ত করা হয় এবং ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হয় প্রথম বর্ষের শ্রেণী কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩২ জন বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছেন। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের দাবিতে সরব হয়েছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, প্রতিনিধিত্ব পেলে তারা নিজেদের সমস্যাগুলো ছাত্র সংসদের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারবেন।
নেপালি শিক্ষার্থী সুমিত শর্মা বলেন, “রাকসু নির্বাচনে যদি আমাদের একজন প্রতিনিধি থাকে, তাহলে ডরমেটরির সুবিধা-অসুবিধাসহ নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলার সুযোগ হবে। এতে আমাদের অনেক সাপোর্ট মিলবে।”
আরেক নেপালি শিক্ষার্থী অর্চনা শাহ বলেন, “আমরা রাকসু নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব চাই। এজন্য আমাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, “বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাকসুর অর্ডিন্যান্সে বিশেষ কোনো আইন নেই। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাই তাদের ভোটাধিকারও নেই। জাতীয় পর্যায়ে ভোট দেওয়ার অধিকার না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও তারা ভোট দিতে পারবে না। যদিও বিষয়টি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্রে সরাসরি উল্লেখ নেই, কিন্তু ভোটাধিকার একটি নাগরিক অধিকার।”
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, “রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। তাই তাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, “তফসিল ঘোষণার আগে তাদের ভোটার করতে যেসব প্রক্রিয়া দরকার ছিল, তা সম্পন্ন হয়নি। তাদের রোল, হল অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হয়নি। এখন এসব শেষ করতে গেলে নির্বাচন এক-দুই মাস পিছিয়ে যেত। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলেন, তারাই ভোটার হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “রাকসু নির্বাচন প্রতিবছর হবে। তাই এবছরের নির্বাচনে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভোটার না হলেও আগামী বছরে সুযোগ পাবেন।”
গত ২৮ জুলাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরে ১২ আগস্ট কয়েকটি সংশোধনী এনে পুনর্বিন্যস্ত তফসিল ঘোষণা করে কমিশন।
পুনর্বিন্যস্ত তফসিল অনুযায়ী ২০ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ, ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট মনোনয়নপত্র দাখিল, ২৭ ও ২৮ আগস্ট বাছাই প্রক্রিয়া, ৩১ আগস্ট প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ২ সেপ্টেম্বর । মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ এবং ৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ করার কথা থাকলেও, মঙ্গলবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনিবার্য কারণে তা স্থগিত করা হয়।
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।