সারা বাংলা

নোয়াখালীর বাজারে অস্থিরতা, নাগালের বাইরে নিত্যপণ্য

নোয়াখালীর বাজারে সবজি ও মাছের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, সরবরাহের ঘাটতি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের অধিপত্য। এছাড়া বৃষ্টিপাত, দুর্যোগ ও পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় মাছ ও সবজির দাম বৃদ্ধিও অন্যতম। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় এসব দ্রব্য সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

মৌসুমের শুরুতে টানা বর্ষণে জমিতে পানি জমে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। একইসঙ্গে মাছের ঘেরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছ ভেসে গেছে। ফলে বাজরে মাছের সংকট তৈরি হয়েছে। 

এ বাড়তি দামের কারণে সাধারণ ক্রেতারা মাছ ও সবজি কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তবে বাজারে সবচেয়ে যেটি বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে ধনিয়া পাতা ও কাঁচা মরিচ।

এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ক্রেতাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায়, সাধারণ মানুষ দ্রুত বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) নোয়াখালীর পৌর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন ১২০ টাকা, ধুন্দল ৮০, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকায় ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, গাঁজর ১২০ টাকা, ধনিয়া পাতা কেজি ৫০০ টাকা, মরিচ ২৬০-২৮০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, দেশি সিম ২৪০ টাকা, পাতা কপি ১২০ টাকা, ফুল কপি ২০০ টাকা, কুমড়া ৬০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৬০০ টাকা, পুঁই শাকের মুঠা ৬০ টাকা, লাল শাক ৫০ টাকা, ডাটা ৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৮০-১০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির পাশাপাশি মাছের বাজারেও দামের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতি কেজি বড় রুই ৪০০-৪৫০ টাকা, বড় কাতল ৪০০-৫০০ টাকা, ইলিশ ১৬০০-২৬০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৮০-২০০ টাকা, কৈ ২২০-২৪০ টাকা, বাইন ৭০০ টাকা, বড় চিংড়ি ১০০০-১২০০, ছোট চিংড়ি ৬০০-৮০০, ছোট পোয়া ৩৫০-৪০০, বড় পোয়া ৫০০-৬০০, ছোট শিং ৩৫০-৪০০, বড় শিং ৪৫০-৫৫০, বাটা ৪৫০-৬৫০, পাবদা ৪০০-৬০০, বড় কোরাল ৭০০, ছোট কোরাল ৪৫০-৫৫০, দেশি বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ ৫০০-৮০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকা, সোনালি কক ৩২০ টাকা, হাইবিট কক ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩২০ টাকা, দেশি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি হালি লাল ডিম ৪৬ টাকা ও হাঁসের ডিম ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আনিসুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, “বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। আমি কোম্পানিতে চাকরি করি, আমার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এভাবে বাড়তে থাকলে আমি কীভাবে চলব? বিক্রেতারা বলছে তাদের কেনা বেশি, তাই খুচরা দামও বেশি।”

আনোয়ার হোসেন নামে আরেকজন বলেন, “যে বেতন পাই, তা দিয়ে চলছে না। বাজারে সব কিছুর দাম বাড়তি। নিত্যপণ্যে আগুন। ডাল-ভাত খাওয়াও এখন কষ্টসাধ্য। মাছ-মুরগী-সবজী সবকিছুতেই বাড়তি দাম। একটা কিনলে আরেকটা কেনার সামর্থ্য থাকে না। গরুর মাংস, ইলিশ মাছ ও খাসির মাংস এখন বিলাসীতার পর্যায়ে চলে গেছে। আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়।”

জসিম উদ্দিন নামে একজন সবজি ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা খুচরা বিক্রেতা। পাইকারি বাজারেও বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে আমাদের। তারাও বলে, বাড়তি দর দিয়ে তারা কিনে আনছে। সঙ্গে শ্রমিক ও পরিবহণ খরচ।”

ফজলুল হক নামে এক খুচরা মাছ ব্যবসায়ী বলেন, “অতিবৃষ্টিতে আমাদের দক্ষিণে সুবর্ণচরে মাছের ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া সাতক্ষীরা, যশোরসহ যেসব জেলা থেকে মাছ আসত, সেটাও কমে গেছে। তাই মাছের বাজার চড়া।”