দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া ও বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় শাক-সবজি, মাছ, মাংস ও ডিমসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে অধিকাংশ পণ্যের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, চাহিদা মেটাতে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের নাভিশ্বাস উঠছে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট ও রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
গত মাসে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১৩০ টাকায়, এ মাসে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
বেড়েছে সবজির দাম: গত মাসে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে, এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। মাসের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অন্যান্য সবজির দামও এক মাসের ব্যবধানে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।
এখন বাজারে দেশি শশা ৮০ টাকা, বেগুন ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, দেশি গাজর ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, প্রতি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। গত মাসে সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে, এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা প্রতি কেজি। তবে, মুদি বাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। এখন প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, রসুন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে জালে মাছ কম ধরা পড়ছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের সরবরাহ কমেছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। চাষের পাঙাস কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, মাঝারি আকারের কৈ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি শিং ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় আকারের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৭০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কী বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা রাজধানীর রায়েরবাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রাজিব আহসান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, এখন বাজারে সবকিছুর দাম বেশি দেখলাম। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের জন্য এই বাজারে চাহিদা অনুযায়ী বাজার করা এখন দুঃসাধ্য। ডিমের ডজন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। মাছ, মাংস, সবজি— সবকিছুর দাম বেশি। তাই, বাচ্চাদের পছন্দ অনুযায়ী কোনো কিছুই কিনতে পারছি না। চাহিদা অনেক কাটছাঁট করে বাজার করতে হয়েছে। সরকারকে বলব, নিম্নআয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
রাজধানীর নিউ মার্কেটর সবজি বিক্রেতা আলাউদ্দিন হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেছেন, গত মাসের তুলনায় সবজির দাম ভালোই বেড়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা যে দরে পাইকারি বাজার থেকে কিনি, পরিবহন খরচসহ ১০ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি। টানা বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে আমরাও পাইকারি বাজার থেকে চাহিদা অনুযায়ী সবজি সংগ্রহ করতে পারছি না। আশা করছি, শীতের মৌসুম এলে সবজির দাম আবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।