আন্তর্জাতিক

অনুপ্রবেশকারী মুক্ত বাংলা গড়ার ঘোষণা মোদির

“একবার ভোট দিন, সব অনুপ্রবেশকারী পালাতে শুরু করবে। যে অনুপ্রবেশরা আমাদের যুবাদের চাকরি ছিনিয়ে নিচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে, নারী নির্যাতন করছে, তাদের আমরা দেশে থাকতে দেব না।” পশ্চিমবঙ্গে একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে গিয়ে এভাবেই ফের অনুপ্রবেশকারী মুক্ত বাংলা গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কড়াবার্তা দিয়ে মোদি বলেছেন, “অনুপ্রবেশকারী দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিজেপিকে ভোট দিলে অনুপ্রবেশকারী পালাবে। ভারত সরকার এজন্য এত বড় অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু ইন্ডি জোট তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে। অনুপ্রবেশকে সমর্থন করছে। বাংলায় অনুপ্রবেশ সামাজিক সংকট তৈরি করছে, এটা থামাতেই হবে। এজন্য আমি লালকেল্লা থেকে ডেমোগ্রাফিক মিশনের ঘোষণা করেছি।”

শুক্রবার বিকেলে সবমিলিয়ে তিনঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের জন্য কলকাতা শহরে আসেন মোদি। সংক্ষিপ্ত সফরে একসঙ্গে উদ্বোধন করেন তিনটি মেট্রো রুটের। এর পরে তিনি দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠে আয়োজিত জনসভায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি থেকে, অনুপ্রবেশ ,লোকসভায় ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলসহ একাধিক বিষয়ে মুখ খোলেন তিনি। 

দমদম সেন্ট্রাল জেল মাঠে ‘পরিবর্তন সংকল্প যাত্রা’ সভায় দেওয়া ভাষণে মোদি বলেন, “তৃণমূল, কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের কিছু দল ভোটব্যাংকের রাজনীতির জন্য অনুপ্রবেশকারীদের তোষণ করছে। এর ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ডেমোগ্রাফি পাল্টে যাচ্ছে, কৃষকদের জমি ও আদিবাসীদের জমি দখল হচ্ছে। দেশ এটা সহ্য করবে না। অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতেই হবে। আর এজন্য তৃণমূলকেও বিদায় নিতে হবে।”

২০২৬সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের স্লোগান দিয়ে মোদি বলেন, “বাংলার প্রয়োজন আসল পরিবর্তন। পরিবর্তন যেটা স্লোগানে নয়, কাজে দেখা যাবে। সেই পরিবর্তন যা ঘরের ছেলে-মেয়েদের এ রাজ্যেই চাকরি দিতে পারবে। পরিবর্তন যা মেয়েদের সুরক্ষা দেবে। বাড়ি ও দোকানকে জ্বলে যাওয়া থেকে বাঁচাবে। পরিবর্তন যা সবাইকে সুবিধা দেবে। কৃষকদের সম্মান দেবে, ফসলের সঠিক দাম দেবে। পরিবর্তন... যেখানে অপরাধী ও দুর্নীতিগ্রস্তরা সরকারে নয়, জেলে থাকবে। এমন পরিবর্তন, যেখানে সুশাসন হবে। গরিবরাও সম্মান নিয়ে বাঁচবে। আসল এই পরিবর্তন শুধু বিজেপিই আনতে পারবে। তাই বাংলার ঘরে ঘরে আমাদের একটা কথা পৌঁছে দিতে হবে, বাংলার সব কোণ থেকে একটাই আওয়াজ আসতে হবে, বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই।”

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সফরের আগে বিহারেও সংক্ষিপ্ত সফর করেন মোদি। লোকসভায় সম্প্রতি পেশ হওয়া ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল নিয়ে দুই রাজ্যেই জনসভায় মুখ খুলেছেন তিনি। 

মোদি বলেন, “যদি কোনো সরকারি কর্মচারী ৫০ ঘণ্টা জেলে থাকেন, তার চাকরি চলে যায়। তা তিনি গাড়ির চালক হোন, কেরানি হোন কিংবা পিয়ন। কিন্তু মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও জেল থেকে সরকার চালাতে পারেন!”

অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও লালু প্রসাদ যাদবের নাম না করে অতীতের উদাহরণ দিয়ে মোদি বলেন, “কিছু দিন আগে আমরা দেখেছি, কীভাবে জেলে বসে বসে ফাইলে সই করা হচ্ছিল। সরকারের নির্দেশিকা কীভাবে জেল থেকে জারি করা হচ্ছিল। নেতারাই যদি এমন আচরণ করেন, তবে আমরা কীভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করব? এনডিএ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন এনেছে। এই আইনের আওতায় প্রধানমন্ত্রীও আছেন।”

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের উদাহরণ টেনে মোদি বলেন, “বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় পাওয়া গিয়েছে। জেলে গিয়েও পদ ছাড়তে হয় না তৃণমূলের মন্ত্রীদের। তৃণমূলের এক মন্ত্রী জেলে গিয়েছেন। তাও তিনি কুরশি ছাড়তে চাননি। তাই দুর্নীতিগ্রস্তরা এই বিলের বিরোধিতা করছেন। সংবিধানের এই অপমান আমি সহ্য করব না।”

যদিও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক এসব বক্তব্যের বাইরে তার সফরে বহু প্রতীক্ষিত একটি নতুন ও দুইটি সম্প্রসারিত মেট্রো রুট পেয়েছে কলকাতাবাসী । দৈর্ঘ্যের নিরিখে মাত্র ১৪ কিলোমিটার মেট্রো লাইন কলকাতার মেট্রো রুটে নতুন যুক্ত হলেও এর মাধ্যমে কলকাতার ৫টি মেট্রো রুট কার্যত জুড়ে গেল।