সারা বাংলা

মহালছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলাবাসীর একমাত্র জনগুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের ভবনটি অতি পুরনো হওয়ায় এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যেই বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন রোগীরা এবং সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা।

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ৪০-৪৫টির মতো গ্রামের প্রায় এক থেকে দেড় লাখ মানুষ সেবা নিতে আসে। তার মধ্যে রাঙ্গামাটির জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ক্যাঙ্গালছড়ি, বেতছড়ি, করল্যাছড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষও এখান থেকে সেবা গ্রহণ করে।

গুরুত্বপূর্ণ এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভবনটি পুরনো হওয়ায় ছাদ থেকে পলেস্টার খসে খসে পড়ছে। বিশেষ করে লেবার ওয়ার্ড, ওষুধ রাখার স্টোর রুম, পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন অংশে খসে পড়েছে। দরজা-জানালাগুলো ভেঙে যাওয়ায় কোনোমতে টিন আর বোর্ড দিয়ে আটকানো হয়েছে। দুই/একটি গ্রেড বিমেও ফাটল ধরেছে। কোনোভাবে ধসে পড়েলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুঘর্টনা।

বিশেষ করে বর্ষাকালে ছাদ থেকে পানি চুইয়ে কক্ষের মধ্যে পড়ে। ফলে লেবার ওয়ার্ড, ওষুধ রাখার স্টোর রুমে রাখা সরজ্ঞামগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে সমস্যায় পড়তে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের। রোগীরা যাতে সুন্দরভাবে চিকিৎসা সেবা পান আর চিকিৎসক ও নার্সরাও যেন সুন্দরভাবে সেবা দিতে পারেন, সেজন্য দ্রুত নতুন করে ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার দাবি করেছেন উপজেলাবাসী।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনটি অতি পুরনো। ফলে উপর থেকে পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। অনেক সময় রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সময় তাদের মাথায় পড়ে। লেবার ওয়ার্ডে ডেলিভারি করানোর সময় প্রসূতি ও নবজাতকের ওপর পলেস্তারা ও চুনের গুড়া পড়ে। এতে তাদের সঠিক চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। প্রায় সময় বাধ্য হয়ে তাদের ডেলিভারি রোগীদের খাগড়াছড়ি সদরে প্রেরণ করতে হয়।

স্টোর কিপার রাজীব পাল বলেন, “বর্ষাকালে পানি চুইয়ে পড়ার কারণে ষ্টোরে রাখা সব ওষুধ ও যন্ত্রপাটি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় রোগীদের রোগ নির্ণয়ের সময় উপর থেকে স্লাইটে পলেস্তারার চুনের গুড়া পড়ে। এতে রোগীর পরীক্ষার রির্পোটও পাল্টে যেতে পারে।”

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চৌংড়াছড়ির বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন, মুবাছড়ি গ্রামের শিমুল চাকমা ও বাবু পাড়ার সৈকত চাকমা বলেন, “একমাত্র স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি অতি পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ। পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। ভয় লাগে কখন মাথার উপরে পড়ে। একটি নতুন ভবন হলে আমাদের সেবা নিতে সুবিধা হবে।”

এ নিয়ে মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ধনিষ্টা চাকমা বলেন, “কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া মতো কোনো পরিবেশ নেই, তবুও করার কিছু নেই। তিনি সিভিল সার্জনের মাধ্যমে বারবার ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্ত এখনো কোনো কিছুই হয়নি।”

খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ডা. ছাবের বলেন, “মহালছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এটি অনেক পুরানো ভবন। এজন্য কিছু কিছু জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এই জায়গায় ৩১ শয্যার পরিবর্তে ৫০ শয্যার ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমি বিভাগীয় মিটিংয়েও উত্থাপন করেছি।”

তিনি বলেন, “মূলত স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এই ভবনগুলোর কাজ করে থাকে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সীমানা প্রাচীরের কাজ শুরু করেছে। আশা করছি, অতিদ্রুত এই কমপ্লেক্সের মূল ভবনের কাজ শুরু হবে। ভবন নির্মাণ হলে মানুষ সুন্দরভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন।”