মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে কাঁচা মরিচের ভালো দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, সিংগাইর, হরিরামপুর, সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চাষিরা মরিচ চাষ করেছেন। তারা মরিচ বিক্রি করে লাভ পাচ্ছেন।
স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। চাষিরা বলছেন, এক কেজি মরিচ উৎপাদনে তাদের খরচ হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। সেই হিসাবে এবার লাভের মুখ দেখছেন তারা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ দাম পাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. রবীআহ নূর আহম্মেদ জানান, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাতেই মরিচ চাষ হয়। এর মধ্যে শিবালয়, ঘিওর, হরিরামপুর ও সাটুরিয়ায় বেশি চাষ হয়। চলতি খরিপ মৌসুমে ৪২৮ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে ৩ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় এবার উৎপাদন কিছুটা কম, যার প্রভাবে বাজারদর বেড়েছে।
তিনি জানান, মরিচ শুধু স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে না, ব্যবসায়ীরা মরিচ সংগ্রহ করে প্যাকেটজাত করে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। ঢাকার বিমানবন্দর হয়ে মরিচ যাচ্ছে লন্ডন, দুবাই, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, ইতালি, ফ্রান্স, নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০ দেশে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে কিনে রপ্তারি করে ভালো অঙ্কের মুনাফা করছেন।
ঘিওর হাটে পাইকাররা প্রতি কেজি মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় কিনেছেন। যেখানে গত সপ্তাহেও দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বরংগাইল, উথলি, ঝিটকা, তরা ও টেপরা হাটে এমন বিক্রি হচ্ছে।
ঘিওরের মাইলাগি গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, “২০ শতাংশ জমিতে মরিচ লাগিয়েছি। এ বছর ফলন তেমন ভালো হয়নি কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় যা আয় হয়েছে, তা গত কয়েক বছরে কল্পনাও করিনি।”
আরেক চাষি হাসান আলী বলেন, ‘‘মরিচ চাষ করে লোকসানের আশঙ্কা থাকলেও এবার লাভজনক হওয়ায় আগামী মৌসুমে চাষিরা উৎসাহী হবেন।’’
দৌলতপুরের কৃষক আবদুল করিম বলেন, “মরিচের দাম ভালো হওয়ায় পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে। গত বছর লোকসান গুনতে হয়েছিল। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারলাম।”
বরংগাইল হাটের আড়তদার রফিকুল ইসলাম জানান, “বিদেশে চাহিদা বেশি থাকায় বাজার চাঙা হয়েছে। যদি সরকার রপ্তানির সুযোগ আরো সহজ করে দেয়, তাহলে চাষি ও ব্যবসায়ী উভয়পক্ষই লাভবান হবে।”
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘মরিচ এ অঞ্চলের সম্ভাবনাময় ফসল। যদিও কয়েক বছর ধরে দাম পড়ে যাওয়ায় অনেকে আবাদ কমিয়েছিলেন। তবে এবারের সাফল্য আবার নতুন আশার সঞ্চার করেছে। কৃষকরা মনে করছেন, সরকার যদি সঠিক সময়ে সংরক্ষণ ও রপ্তানির ব্যবস্থা করে দেয়, তবে মরিচ চাষ করে চাষিরা লাভবান হবে।’’