সারা বাংলা

ফেনীতে বালু উত্তোলন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের হট্টগোল

ফেনীর সোনাগাজীতে কালিদাস পাহালিয়া নদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে তাদের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর বন্দর মার্কেট এলাকায় কালিদাস পাহালিয়া নদীর নবাবপুর সেতুর তলদেশ থেকে নদী ভাঙন রোধে বালু ভরাটের কথা বলে গত ১৫ দিন ধরে বালু তোলা হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়ে সেতু, সেতুর তলদেশ ও আশপাশের সড়ক। নদীর গতিপথ পরিবর্তন প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং ও বালু উত্তোলনে অনিয়ম করে আশপাশের জমি, পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একজন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে ইউনিয়নবাসীর পক্ষে নবাবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ভূঁইয়া জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পরে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে উভয়পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ ও উন্নয়ন) রোমেন শর্মা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনজুর আহসান ও সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিগ্যান চাকমা উপস্থিত ছিলেন। 

ভুক্তভোগী আব্দুল হাই বলেন, “আমাদের না জানিয়ে তারা ক্ষমতার জোরে জায়গা ভরাট করে ফেলেছে। যেখান থেকে বালু নেওয়ার কথা সেখান থেকে কাটছে না। আমার ২১ শতক জায়গা নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রশাসনের কাছে এর প্রতিকার চাই।”

অভিযোগকারী জহির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, “আমি ইউনিয়নের সর্বসাধারণের পক্ষে অভিযোগ করেছি। বালু উত্তোলনে ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীর বাঁক পরিবর্তন ও চর কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ফরহাদনগরের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চু ও নবাবপুরের চেয়ারম্যান জহিরের যৌথ তত্ত্বাবধানে বালু উত্তোলন করছে। চর না কেটে তারা নদী থেকে বালু তুলে টাকার বিনিময়ে আশপাশের জমি-পুকুর ভরাট করছে। আমরা চাই সেনাবাহিনীকে দিয়ে কাজটি করানো হোক।”

নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হক জহির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অবৈধভাবে কোনো বালু উত্তোলন করা হয়নি। কেউ প্রমাণ করতে পারলে আমি দায় নেব। বালুগুলো উত্তোলন করে জমা রাখা হচ্ছে, তাই আশপাশের জায়গা ভরাট হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন হয়েছে। আরো অন্তত ২৫ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন বাকি আছে। আমি কেবল তদারকি করছি, ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই।”

ফরহাদ নগরের সাবেক চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বাচ্চু বলেন, “এখানে বালু উত্তোলনের কাজে যে সরঞ্জামগুলো ব্যবহার হচ্ছে আমি তা ভাড়া দিয়ে তদারকি করছি। সরকার নদী সোজা করার লক্ষ্যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাই বালুগুলো এক জায়গায় রাখা হচ্ছে। এসব বালু সরকারের। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়।”

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিগ্যান চাকমা বলেন, “নদীর গতিপথ পরিবর্তন প্রকল্পের আওতায় বালু উত্তোলনের কাজ চলছে। জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগের ভিত্তিতে কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসেছেন।”

পরিদর্শনে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে কিনা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, “যেহেতু আমার ঊর্ধ্বতনরা এসেছেন, আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ ও উন্নয়ন) রোমেন শর্মা বলেন, “এখানে নদী ভাঙন রোধ ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য চর কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত আছে কিনা, সরকারি টাকায় কেউ লাভবান হচ্ছে কিনা বা অভিযোগকারীদের স্বার্থ রয়েছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখব। যদি অনিয়ম প্রমাণিত হয়, তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”