২০২১ সালের এক সকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গুণবতী ইউনিয়নের চাপাচৌঁ গ্রামের মাঠে বন্ধু আমির হোসেন সওদাগরের জানাজা চলছিল। সবার পেছনে কাঠের গুঁড়ির স্তুপের উপর বসে অঝোরে কাঁদছিলেন সুধীর বাবু। তার চোখে ছিল বাল্যবন্ধুকে হারানোর শোক, মুখে ছিল অব্যক্ত কষ্টের ছাপ। মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি হওয়ার পর ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই দৃশ্য হৃদয় কাঁদিয়েছিল দেশবাসীকেও।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চির বিদায় নিলেন তিনিও। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেলেন দুই ছেলে, পাঁচ মেয়ে আর অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন। নিয়ে গেলেন গ্রামের মানুষের বুকভরা ভালোবাসা।
সুধীর বাবুর ছেলে অর্জুন চন্দ্র দাস তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘‘আমার বাবা বার্ধক্যজনিত কারণে মঙ্গলবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রাতেই গ্রামের শ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার বাবা এবং মীর হোসেন চাচা ছিলেন বাল্য বন্ধু। মীর চাচার মৃত্যুতে বাবা মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন।”
সুধীর-আমিরের বন্ধুত্বের গল্পের শুরু বহু বছর আগে। তারা দুজনেই একই গ্রামের ছেলে। একই মাঠে খেলাধুলা, একই আড্ডায় হাসি-ঠাট্টা, একই বাজারে ব্যবসা। ধর্মের ভিন্নতা কোনোদিন তাদের দূরে সরাতে পারেনি। দিন শেষে দোকান গুটিয়ে দুজনে বসে গল্প করতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। জীবনের ব্যস্ততা, সময়ের পরিবর্তন, বয়সের ভার কোনো কিছুই তাদের বন্ধনকে ভাঙতে পারেনি।
তবে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাতটা ছিল ভিন্ন। সে রাতে চলে গেলেন আমির হোসেন। ছিঁড়ে গেল বন্ধনের সুতো। পরদিন সকালে জানাজায় উপস্থিত হয়ে সবার পেছনে গাছের গুঁড়িতে বসে খুব নীরবে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছিলেন সুধীর বাবু। সেই কান্না ছিল না শুধু বন্ধুকে হারানোর- ছিল এক জীবনের সঙ্গীকে হারানোর যন্ত্রণা, ছিল শূন্য হয়ে যাওয়া হৃদয়ের আহাজারি।