পজিটিভ বাংলাদেশ

দুই টাকায় পেটপুরে খাওয়া, কয়েক তরুণের অবিশ্বাস্য উদ্যোগ 

সাজানো চেয়ার-টেবিল। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। যত্ন নিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে খাবার। খাবার তালিকায় রয়েছে ভাত মাছ মাংস ডাল ইত্যাদি। প্রথম দেখায় যে কেউ ভাবতে পারেন- কোনো অনুষ্ঠানে মেহমানদারি করা হচ্ছে। কিন্তু তা নয়। আবার এটা ঠিক হোটেলও নয়; অন্তত খাবার মূল্য বিবেচনায়। খাবার খাচ্ছেন একদল অসহায়, দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ। যাদের মধ্যে রয়েছে শিশু, রিকশাচালক, অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তারা প্রত্যেকেই দুই টাকার বিনিময়ে পাচ্ছেন এই খাবার। আর এই আয়োজনের নেপথ্যে রয়েছেন রাজবাড়ীর একদল যুবক, যারা অধিকাংশই শিক্ষার্থী।

সপ্তাহে যে কোনো দুইদিন এই হোটেলে নামমাত্র দুই টাকা দিয়ে অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষ পেটপুরে খেতে পারেন। বাড়িতে রান্না করা সাদা ভাত, সাথে গরু ও মুরগির মাংস, ডাল বা মুড়িঘন্ট, কখনও রুটি, আবার কোনো দিন ইলিশ খিচুরি- এই আয়োজন করা হয় ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষের জন্য। আয়োজকরা তাদের বলেন ‘অতিথি’। এই অতিথিদের জন্য রয়েছে নিমন্ত্রণপত্র। অর্থাৎ তারা অসহায় মানুষ দেখে নিমন্ত্রণপত্র দেন এবং দুই টাকার হোটেলে নিমন্ত্রণ জানান।

রাজবাড়ী শহরের রেলস্টেশনের পাশে ফুলতলা ও রাজবাড়ী পৌর ইংলিশ মার্কেটের সামনেই এই হোটেলের অবস্থান। তবে সেটি স্থায়ী কোনো আবাসন নয়। অস্থায়ীভাবে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে সেখানেই খাবারের আয়োজন করা হয়। 

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে গিয়ে দেখা যায়, সকালে খাবার ছিল- খাশির পায়ের নেহারি, পরোটা, ড্রাগন ফল, মাল্টা, কলা আর পেয়ারা। কিছু অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষ খাবার খাচ্ছেন। তাদের পরিবেশন করছেন কয়েকজন যুবক।

খেতে আসা দিনমজুর মোবারক বলেন, ‘‘দুই টাকা দিয়ে আমরা চেয়ার-টেবিলে বসে খাচ্ছি। ফল, পরোটা, খাসির পায়া খাচ্ছি, যা আমরা কখনো কিনে খেতে পারি না। মনে হচ্ছে আমরা কোনো বড় হোটেলে বসে খাচ্ছি।’’

আলী হোসেন নামে আরেক দিনমজুর বলেন, ‘‘আমি রাজশাহী থেকে রাজবাড়ী এসেছি ভ্রাম্যমাণ কাজের উদ্দেশ্যে। সারাদিন কাজ না পেয়ে স্টেশনেই থাকি। তখন দুই টাকার হোটেলের খবর পাই। এখানে এসে দেখি দুই টাকায় কত রকমের দামি খাবার! পেট ভরে খেতে পেরেছি।’’

উদ্যোক্তাদের একজন শিক্ষার্থী মা‌হিন শিকদার জানান, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেক মানুষ আছে যারা ভালো-মন্দ খাওয়া দূরের কথা, অনেক সময় না খেয়ে তাদের দিন কাটে। ওসব মানুষের কথা চিন্তা করে, তাদের ভালোবেসে আমাদের এই উদ্যোগ। 

খাবার রান্নার বিষয়ে মাহিন বলেন, ‘‘সাগর ভাইয়ের মা আমাদের কাজে খুশি হয়ে সবার জন্য রান্না করে দেন। আন্টির হাতে রান্না করা খাবার সবাইকে খাওয়ানো হয়।’’

আরেক উদ্যোক্তা মনিরুল হক সাগর বলেন, ‘‘আমাদের হোটেলে  নিম্নমানের কোনো খাবার দেই না। সম্পূর্ণ বাসায় রান্না করা এবং আমরা যা খাই সেটা এখানে দেওয়া হয়। সপ্তাহে দুদিন আমরা হোটলের কার্যক্রম চালাই এবং আমরা নিজেরাই মেহমানদারিত্ব করি। যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অসহায় ও দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের জন্য একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা।’’