ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরো নির্বাচনী পরিকল্পনার রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশন এ কর্মসূচি তৈরি করেছে, যাতে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হামিদ।
তিনি জানান, নির্বাচনের তফসিল ভোটগ্রহণের ৬০ দিন আগে ঘোষণা করা হবে। সম্ভাব্য ভোটের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, কারণ ওই সময়ের পরই রমজান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রমজানের আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পরামর্শ এসেছে বলেও উল্লেখ করেন সচিব।
সংলাপ, পোস্টাল ভোটসহ কর্মপরিকল্পনা কমিশনের প্রকাশিত রোডম্যাপে রাজনৈতিক সংলাপ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনী আইন সংস্কার, নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, পোস্টাল ভোট, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং ভোটের প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতির সময়সূচি সংলাপ: সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়ে এক থেকে দেড় মাস চলবে। ভোটার তালিকা: ৩১ আগস্ট দ্বিতীয় ধাপের তালিকা চূড়ান্ত, ৩০ নভেম্বর প্রকাশ হবে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা। নির্বাচনী আইন সংস্কার: আরপিওসহ অন্যান্য আইন সংশোধনের কাজ চলছে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর লক্ষ্য। দল নিবন্ধন: সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত নিবন্ধনের গেজেট প্রকাশ। সীমানা নির্ধারণ: সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গেজেট প্রকাশ, মাসের শেষ নাগাদ জিআইএস ম্যাপ প্রস্তুত।
পোস্টাল ভোট: সফটওয়্যার ও অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট অক্টোবরে শেষ হবে। প্রবাসী ভোটারদের ব্যালট পাঠানো হবে নভেম্বর মাসে। কারাবন্দি ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভোট: ভোটের দুই সপ্তাহ আগে ব্যবস্থা গ্রহণ। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক: সেপ্টেম্বর ও তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বৈঠক চলবে। ভোটগ্রহণ: ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা। তফসিল ঘোষণা: ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা।
প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি রোডম্যাপে উল্লেখযোগ্যভাবে গুরুত্ব পেয়েছে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি। পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য সফটওয়্যার ও মোবাইল অ্যাপ নির্মাণ, ব্যালট ট্র্যাকিং মডিউল তৈরি, ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থা এবং বেসরকারি ফলাফল প্রচার ব্যবস্থা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে নির্বাচনী বাজেট, প্রশিক্ষণ, প্রচারণা ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সমন্বয়সহ সব ধরনের লজিস্টিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন কমিশনকে রমজানের আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করার লিখিত পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনও সে অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করে ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে কমিশন।