আন্তর্জাতিক

অমিত শাহের মাথা কেটে টেবিলে রাখা উচিত: মহুয়া মৈত্র

ভারতের সীমান্ত রক্ষা না করতে পারলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মাথা কেটে প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে দেওয়া উচিত! সম্প্রতি এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। 

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে এমন মন্তব্যের জেরে তীব্র বিতর্ক বেধেছে। তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। এমনকি, মহুয়ার বিরুদ্ধে একাধিক থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট মহুয়া মৈত্র কৃষ্ণনগরে পাট্টা বিলির অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। ওই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সুর চড়ান। বলেন, “তারা (বিজেপি) বারবার অনুপ্রবেশকারীদের কথা বলছে; কিন্তু ভারতের সীমান্ত পাঁচটি বাহিনী দ্বারা সুরক্ষিত এবং এটি সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ভারতের সীমান্তরক্ষার দায়িত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে বলে স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় প্রথম সারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাঁড়িয়ে নির্লজ্জভাবে হাততালি দিচ্ছিলেন। যদি ভারতের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে কেউ না থাকে, অন্য দেশের শয়ে শয়ে, লাখে লাখে মানুষ এদেশে ঢুকে পড়ে, তাহলে প্রথমেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথা কেটে প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে রাখা উচিত।” 

তৃণমূল সাংসদের এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। কীভাবে একজন সাংসদ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘মাথা কেটে নেওয়া’র কথা বলতে পারেন, সে প্রশ্ন উঠতে থাকে। মহুয়ার বিরুদ্ধে দেশবিরোধী মন্তব্যের সুর চড়ান একাধিক বিজেপি নেতা।

মহুয়ার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার। একইসঙ্গে তিনি জানান, এই নিয়ে লোকসভার অধ্য়ক্ষ ওম বিড়লাকে চিঠি লিখবেন। আবার বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীও টিটাগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। দ্রুত পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ব্যক্তিগত আক্রমণে থেমে থাকেননি  কৃষ্ণনগরের সাংসদ। বিজেপির অনুপ্রবেশ ইস্যুকে নাকচ করে বাংলাদেশিদের ভাইবোন বলেন মহুয়া। বলেন, তিনি নিজেই বিএসএফের ভয়ে থাকেন। 

মহুয়া বলেন, “যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের সীমান্ত রক্ষা করতে পারে না এবং প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন যে অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের জনগণকে বিরক্ত করছে, তখন দোষ কার? এটা আমাদের? না আপনার?” 

তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, সীমান্তে সুরক্ষা বাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কেন অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে তা নিয়ে। মহুয়া বলেন, “এখানে বিএসএফ তো রয়েছে। আমরাই বিএসএফের ভয়ে থাকি। ওনারা (বিজেপি) বলেন, অনুপ্রবেশ করছে, লোক আসছে, কই আমরা তো দেখি না। আমরা কিন্তু বাংলা মায়ের কোল থেকেই এসেছি। এককালে আমরা অভিভক্ত বাংলাই ছিলাম। এটা যে হচ্ছে ৭১ এর পরে যে লোকেরা এসেছে। আমাদের ভাষা এক, আমাদের মানুষ এক। বাংলাদেশ অনলি ফ্রেন্ডলি কান্ট্রি, আমরা তো আজীবন এই এরিয়াতেই আছি। তো এখানে আমরা দেখেছি যে, বাংলাদেশ একমাত্র ফ্রেন্ডলি কান্ট্রি। সেখানে দাঁড়িয়ে আপনারা বাংলাদেশিদের ডিমোনাইসড করে নিয়েছেন। ভারতবর্ষের প্রত্যেকটা বিজেপির নেতা এমন ভাব করছেন যেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ বদ, বাংলাদেশের মানুষ অসভ্য। কই আমরা তো কোনোদিন এটা দেখিনি। বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কোনো প্রবলেম হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষজন তো আমাদের ভাইবোন। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আমরা কেন খারাপ ব্যবহার করব। আমাদের সবার পরিবার পরিজন আছে বাংলাদেশের মাটিতে।”

মহুয়ার দাবি, “বিজেপির চেষ্টা সবসময় মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা। বিজেপি এই যে ডেমোগ্রাফির কথা বলছে, এটা আসলে পরিষ্কার ভাষায় মুসলমানদের ধরে খেদাও। আর কিছু নয়। বিজেপির মিশন ডেমোগ্রাফির মানে হচ্ছে, হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করো। যেখানেই মুসলমান দেখছো, মাইনরিটি দেখছো, তাদের ধরে তাদের ওপর লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, তাড়িয়ে দেওয়া এটাই।”