একসময় নদীটি ছিল খরস্রোতা। নৌ-পথে স্থানীয় লোকজন যাতায়াত করতেন বাজারে। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন জেলেরা। তবে, এখন আর কিছুই নেই।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত গাজীখালী নদী এখন পুরোপুরি কচুরিপানার দখলে। গোপালপুর থেকে শুরু হয়ে ধামরাইয়ের বারবারিয়া হয়ে সিঙ্গাইরে ধলেশ্বরীতে গিয়ে মেশা এই নদীতে পানির প্রবাহ না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
তারা জানান, গত এক দশকে দুই দফায় প্রায় ১৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে নদী খননে। ২০১২ সালে গোপালপুর এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার খনন করা হয় এক কোটি টাকা ব্যয়ে। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে “ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের” আওতায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়। খননের পর কিছুদিন পানি প্রবাহ দেখা গেলেও দ্রুত আবার কচুরিপানায় ভরে যায় নদী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজটি সঠিকভাবে হয়নি; বরং অর্থ আত্মসাত হয়েছে বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীজুড়ে এমনভাবে কচুরিপানার স্তূপ জমে আছে যে, পানির অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ এই নদীকে কেন্দ্র করে একসময় সাটুরিয়া বাজার গড়ে উঠেছিল। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বড় বড় নৌকা ও স্টিমারে করে আসতেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এখন ছোট নৌকাও এই পথে চলতে পারে না।
৭৫ বছর বয়সী গোলাম মোস্তফা বলেন, “সাটুরিয়া বাজার পর্যন্ত স্টিমার চলত। নদীতে ছিল প্রাণ। এখন মনে হয়, নদীটা মারা গেছে। নদীটির পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ হলো, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই নেই।”
হরগজ গ্রামের আব্দুল খালেক একই সুরে বলেন, “গ্রাম থেকে হাটে যাওয়ার একমাত্র ভরসা ছিল এই নদী। এখন নদী শুকিয়ে গেছে, সেখানে শুধু কচুরিপানা। নৌকা চলে না, পানিও দেখা যায় না।”
কলেজ শিক্ষক ইয়াসিনুর রহমান বলেন, “গাজীখালী নদী এখন মৃতপ্রায়। কচুরিপানার কারণে নৌচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানির গুণগত মান নষ্ট হয়ে মাছ মরছে। ফলে জেলেরা পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। যে নদী ঘিরে একসময় জনপদ গড়ে উঠেছিল, আজ সেই নদী দমবন্ধ করা এক হতাশার নাম।”
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, তিনি সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন। কত টাকা বরাদ্দ ছিল তা খতিয়ে দেখতে হবে। তার মতে, বর্ষাকালে কচুরিপানা স্বাভাবিক; শুষ্ক মৌসুমে পরিস্থিতি স্পষ্ট বোঝা যাবে। কচুরিপানা সরানোর জন্য বর্তমানে কোনো প্রকল্প বা বরাদ্দ নেই বলেও তিনি জানান।