ক্যাম্পাস

বাকৃবিতে ছাত্রদল-যুবদলের হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে রেললাইন অবরোধ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) স্থানীয় সাবেক ছাত্রদল, যুবদল, তাঁতীদলের নেতাকর্মীরা ও ঠিকাদার চক্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এ হামলার প্রতিবাদে আবারো রেলপথ অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, রবিবার (৩১ আগস্ট) রাত পৌনে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এ হামলা করে তারা। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। হামলার ঘটনায় নারী শিক্ষার্থীসহ ১৫ জন আহত হন বলে জানা গেছে। 

পরে রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব শিক্ষার্থীকে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে হল ত‍্যাগের নির্দেশ প্রদান করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, উপাচার্যের নির্দেশে পশুপালন অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. মনির হোসেন এবং ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মতিউর রহমানের সমন্বয়ে স্থানীয় ঠিকাদার ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের দলীয় ক্যাডারদের ফোন করে ডাকা হয়। এরপর ঠিকাদার বিটু, বহিষ্কৃত যুবদল নেতা নজরুল, ছাত্রদল নেতা নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগ পাওয়া এসআই লিটনসহ কয়েকজন বহিরাগত হামলায় অংশ নেয়।

হামলাকারী হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম যুবদল নেতা বিটু। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ঠিকাদারির কাজ তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া রয়েছেন, বহিষ্কৃত যুবদল নেতা নজরুল যার স্ত্রী বাকৃবিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত, সাবেক ছাত্রদল নেতা রিয়াজ উদ্দিন নয়ন, ছাত্রদল নেতা এসআই লিটন, ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল, ২২নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আলম এবং ছাত্রদল নেতা মাসুদ। 

সুত্র জানায়, সরাসরি উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনির নেতৃত্বেই হামলা পরিচালিত হয়। তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক সহ-সভাপতি শরীফ, মিশু এবং কেওয়াটখালীর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী নয়ন। নয়ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আতিকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এছাড়া জনির নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর, সিফাত, রবিন ও সিপনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

হামলায় অংশ নেওয়া আসাদ ২১নং ওয়ার্ড তাঁতীদলের সভাপতি এবং রিফাত মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। তারা লাইব্রেরিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “আমরা আড়াই শতাধিক শিক্ষক আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছি। শতভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরেও কেন তারা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করলো, সেটি আমার প্রশ্ন। ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকেরা প্যানিকড ও ট্রমায় পড়ে যান। পরে কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষীরা গেইট ভেঙ্গে শিক্ষকদের বের করতে সাহায্য করেন।”

বহিরাগতদের হামলার তিনি বিষয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীরা বলছে- শিক্ষকরা বহিরাগতদের দিয়ে তাদের ওপর হামলা করেছে, এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমরা বাইরের কাউকে বলিনি ক্যাম্পাসে আসতে, আমরা কেন বলব? ছাত্রছাত্রীরা তো আমাদের ছেলে মেয়ের মতো। তাদের জন্যই জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে বিষয়টি সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

এদিকে, বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবিতে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড় সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এর আগে, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের হামলার এবং ক্যাম্পাস ও হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কে. আর মার্কেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শিবলী সাদী বলেন, “বাকৃবিতে বহিরাগতরা এসে শিক্ষার্থীদের ওপর যে নেক্কারজনক হামলা করেছে, আমরা তার নিন্দা জানাই এবং বিচার চাই। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা তা প্রত্যাখান করছি। ছয় দফা বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”