নরসিংদীর নিরালা আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে আলমগীর হোসেন (৩০) নামে এক কর্মচারীকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে হোটেল মালিকের ছেলে জাহিদ সরকারের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (৩০ আগস্ট) পৌর শহরের বাজিরমোড় এলাকার ওই হোটেলে ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগীর বাবা হারিছ মিয়া বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সবার নজরে আসে।
অভিযুক্ত জাহিদ সরকার (২৮) নরসিংদী বৌয়াকুড় এলাকার বাসিন্দা ও নিরালা আবাসিক হোটেলের মালিক জাহাঙ্গীর সরকারের ছেলে। ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন শহরের বানিয়াছল এলাকার হারিছ মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, আলমগীর হোসেন শহরের বানিয়াছল এলাকায় জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন ‘নিরালা হরিণ বাড়ি’ নামে একটি খামার দেখা-শোনার দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি খামার থেকে জেনারেটরের ব্যাটারি চুরি হয়। এ ঘটনায় খামারের মালিকের ছেলে জাহিদ সরকার কর্মচারী আলমগীকে সন্দেহ করেন। গত শনিবার আলমগীরকে হোটেলে ডেকে নিয়ে যান তিনি।
হোটেল কক্ষে জাহিদ সরকার ও তার লোকজন আলমগীরকে গলায় রশি দিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে লোহার পাইপ দিয়ে পেটান। এক পর্যায়ে জাহিদ সরকার ছুরি দিয়ে আলমগীরের শরীরের বিভিন্ন স্থান খুঁচিয়ে জখম করেন। পরে একই এলাকার শাকিল নামে অপর একটি ছেলেকেও মারধর করেন তিনি।
একপর্যায়ে শাকিলের হাতে পাইপ দিয়ে আলমগীরকে মারতে বলেন এবং মারধরের ভিডিও ধারণ করেন জাহিদ। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আলমগীরকে শাকিলের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠান। পরিবারের সদস্যরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আলমগীরকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। পরে তাকে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে নরসিংদী মডেল থানায় আলমগীরের বাবা হারিছ মিয়া বাদী হয়ে জাহিদ সরকারকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- সিয়াম, আল আমিন ও শাকিল।
আলমগীরের বাবা হারিছ মিয়া বলেন, “আমার ছেলেকে হোটেলের রুমে আটকে গলায় রশি দিয়ে জানালার সঙ্গে বেঁধে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। ধারালো ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গলা থেকে পা পর্যন্ত রক্তাক্ত জখম করেছে। আমার ছেলের শরীরে থাকা রক্তমাখা শার্ট ও প্যান্ট খুলে রেখে ডেকোরেটরের কাপড় পড়িয়ে শাকিলকে দিয়ে বাড়িয়ে পাঠায়। শুনেছি, তার শরীর থেকে খুলে রাখা রক্তমাখা কাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেলেছে। এমনকি ডাক্তার দেখালে এবং পুলিশের কাছে গেলে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে।”
ভুক্তভোগীর মা সমলা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে জীবন ভিক্ষা চেয়েছে, তারপরও তাদের মন গলেনি। তারা আমার ছেলের দুই হাত ভেঙে দিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি দিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। আমরা গরিব মানুষ, ওদের সাথে ক্ষমতায় পারব না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।”
এ ব্যাপারে জানতে হোটেল মালিক জাহাঙ্গীর সরকার ও তার ছেলে জাহিদ সরকারের মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, “এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”