বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খেল জার্মানি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তারা ২-০ গোলে হেরে গেছে স্লোভাকিয়ার কাছে।
এদিন ডেভিড হানকো আর ডেভিড স্ট্রেলেকের গোলে এগিয়ে যায় স্লোভাকিয়া। যারা শেষবার বিশ্বকাপ খেলেছিল ২০১০ সালে। জার্মানির রক্ষণভাগের একের পর এক ভুল কাজে লাগিয়ে দুই গোল তুলে নেয় স্বাগতিকরা। আর ম্যাচে ফেরার কোনো উপায় খুঁজে পায়নি চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এর আগে কখনোই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অ্যাওয়ে ম্যাচে হারেনি জার্মানি। ৫২ ম্যাচে সেই রেকর্ড ভাঙল স্লোভাকিয়ার মাঠে। সব মিলিয়ে ১০৪টি বাছাই ম্যাচে এটি তাদের মাত্র চতুর্থ হার। আরও অবাক করা বিষয় হলো— ১১৭ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে টানা তিন পরাজয়ের মুখ দেখল জার্মানি।
কোচ জুলিয়ান নাগেলসমান ও তার নতুন গড়া দলের জন্য এটি এক বড় আঘাত। নিউক্যাসলের নতুন স্ট্রাইকার নিক উল্টেমাডে মাত্র তৃতীয় ম্যাচ খেললেন জার্মানির হয়ে। আর ডানপাশে অভিষেক হলো ২১ বছর বয়সী ননামদি কলিন্সের। কিন্তু প্রত্যাশা মেলেনি কারও কাছ থেকে।
হার নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেন নাগেলসমান। তার ভাষায়, দলটিতে মাঠে ছিল না প্রয়োজনীয় আবেগ আর জয়ের মানসিকতা। এমনকি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, দক্ষতার চেয়ে হয়তো একনিষ্ঠতা ও লড়াকু মানসিকতাই বেশি দরকার। তার কথায়, “হয়তো আমাদের দক্ষ খেলোয়াড়দের ওপর কম নির্ভর করে, এমন খেলোয়াড় বেছে নিতে হবে যারা নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দেবে। আজকে তাতে ভালো ফল আসত।”
এখন বাছাইপর্বে প্লে-অফ এড়াতে শেষ পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতেই জয় পেতে হবে জার্মানিকে।
ম্যাচের শুরুটা অবশ্য ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। স্লোভাকিয়ার তরুণ লিও সাওয়ার কাছ থেকে প্রথম আক্রমণ আসে। তবে জার্মান গোলরক্ষক অলিভার বাউমান তা ঠেকান। অন্যদিকে জার্মানির হয়ে প্রথম সুযোগ পান ম্যাক্সিমিলিয়ান মিটেলস্টেড। কিন্তু তার শক্তিশালী শট দুর্দান্ত ভঙ্গিতে ঠেকিয়ে দেন স্লোভাক গোলকিপার মার্টিন ডুব্রাভকা।
ধীরে ধীরে খেলায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। অ্যান্টোনিও রুডিগারের ভুলে সাওয়ার একবার একেবারেই গোলমুখে চলে গিয়েছিলেন। তবে জোনাথান টাহ সেই শট ব্লক করেন। এর আগেই লিয়ন গোরেৎস্কার শটও ঠেকিয়েছিলেন ডুব্রাভকা।
লিভারপুল তারকা ফ্লোরিয়ান ভার্টজ চমৎকার ফুটওয়ার্কে দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও নায়ক হয়ে ওঠেন স্লোভাক গোলকিপার।
অবশেষে ৪২ মিনিটে আসে গোল। ডেভিড স্ট্রেলেকের কাটব্যাকে বল পান হানকো, এক টাচে বল জালে জড়ান তিনি। বিরতিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্লোভাকিয়া।
৫৫ মিনিটে আরও বড় ধাক্কা খায় জার্মানি। এবার নিজেই জাদু দেখান স্ট্রেলেক। রক্ষণভাগ কাটিয়ে দুর্দান্ত শটে বল জড়িয়ে দেন জালের উঁচু কোণে।
এরপর সময় গড়ালেও জার্মানির আক্রমণ ছিল নিস্তেজ। যোগ করা সময়ে স্টানিস্লাভ লোবোটকা প্রায় আত্মঘাতী গোল করে বসেছিলেন। তবে আবারও স্লোভাক নায়ক হয়ে দাঁড়ালেন ডুব্রাভকা। তার হাতেই রক্ষা পেল ক্লিন শিট।
শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই স্লোভাকিয়ার মাঠে গর্জে ওঠে উল্লাস। আর হতাশ মুখে ড্রেসিংরুমে ফেরে জার্মানির খেলোয়াড়রা। যাদের সামনে এখন বাছাইপর্বের অভিযানে টিকে থাকতে বাকি ম্যাচগুলোতে মরিয়া লড়াই ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।