দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটলা–দাউদপুর গ্রামের ইজিবাইক ও ভ্যানচালকরা এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে অন্ধকারে মুঠোফোন ও ইজিবাইকের আলো জ্বেলে ১২ থেকে ১৩ জন ভ্যান ও ইজিবাইক চালক হাতে কোদাল তুলে নেমে পড়েন কাঁচা রাস্তা সংস্কারে। কেউ গর্ত ভরাট করছেন, কেউ খাটিয়ার সাহায্যে মাটি সমান করছেন। পথচারীরা তাদের এই মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
স্থানীয়রা জানান, কাটলা–দাউদপুর গ্রামের প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০ ফুট প্রশস্ত এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ চলাচল করে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বর্ষাকালে রাস্তাটি কাদা ও গর্তে ভরে যায়। এতে ইজিবাইক, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল চলাচল একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। রোগী পরিবহন, শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া, বাজারে যাতায়াতসহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না।
গ্রামের সাধারণ মানুষের দাবি, স্বেচ্ছাশ্রমে সাময়িক মেরামত হলেও স্থায়ী সমাধান হবে না। তাই সরকারের জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
ভ্যানচালক আবুল হোসেন বলেন, “বর্ষাকালে এই রাস্তা দিয়ে ভ্যান চালানো যায় না, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, রোগী নেওয়া যায় না। একদিন ভ্যান চালাতে না পারলে আমাদের মুখে খাবার ওঠে না। তাই নিজেরাই কাজ করছি।”
ইজিবাইক চালক আবুল কালাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ভ্যান চালিয়ে খাই, না চালালে খাওয়া নাই। সপ্তাহে ১ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। রাস্তায় দুর্ঘটনায় গাড়ি উল্টে যায়। চেয়ারম্যান–মেম্বাররা বিষয়টি আমলে নেয় না। ভোট দেই, তবু রাস্তা পাকা হয় না।”
স্থানীয় শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেলে স্কুলে যাই। প্রায়ই কাদা–পানিতে ভিজতে হয়। ভ্যানচালকদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে সরকারকেও দ্রুত রাস্তা পাকাকরণের উদ্যোগ নিতে হবে।”
গরু খামারি মোজাফফর হোসেন বলেন, “২৫টি গরু নিয়ে খামার করেছিলাম। কিন্তু রাস্তার দুর্ভোগে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক উদ্যোক্তাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।”
স্থানীয় মসজিদের ইমাম রেদওয়ানুল করিম বলেন, “বর্ষায় এই রাস্তা দিয়ে হাঁটা–চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অসুস্থ মানুষ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। যারা রাত জেগে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছে, তারা অবশ্যই আল্লাহর কাছে সাদাকায়ে জারিয়ার সওয়াব পাবেন।”