রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে ফের যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন ইউরোপের নেতারা। ট্রাম্প নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর বিবিসির।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ইউরোপীয় নেতারা সোমবার বা মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। ইউরোপীয় নেতারা এর আগে সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন।
ট্রাম্প আরো জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথেও কথা বলবেন। একই সঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তার প্রশাসন মস্কোর ওপর দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রস্তুত।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ধারণাটি সঠিক। ইউরোপীয় দেশগুলোকে রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাশিয়া ইউক্রেনে বড় ধরনের বিমান হামলা চালানোর পরপরই নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। রবিবার রাশিয়া ইউক্রেনে কমপক্ষে ৮১০টি ড্রোন এবং ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো কিয়েভে ইউক্রেনের প্রধান সরকারি ভবনেও হামলা চালিয়েছে।
এ নিয়ে ট্রাম্প প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “তিনি পুরো পরিস্থিতি নিয়ে খুশি নন।”
ট্রাম্প বলেন, “কিছু ইউরোপীয় নেতা সোমবার বা মঙ্গলবার পৃথকভাবে আমাদের দেশে আসছেন।” তবে তিনি কাদের কথা বলছেন, তা স্পষ্ট করেননি।
গত মাসে আলাস্কায় ট্রাম্প এবং পুতিনের শীর্ষ সম্মেলনের পর থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ তীব্র করেছে।
এবিসি নিউজের সাথে কথা বলতে গিয়ে জেলেনস্কি বলেন, “ইউরোপীয় অংশীদাররা রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কেনা অব্যাহত রেখেছে, তা ন্যায্য নয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের রাশিয়া থেকে যেকোনো ধরনের জ্বালানি কেনা বন্ধ করতে হবে এবং সেটা হোক রাশিয়ার সাথে যেকোনো চুক্তিও। আমরা যদি তাদের থামাতে চাই, তবে আমাদের কোনো চুক্তি হতে পারে না।”
জেলেনস্কি রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যকারী দেশগুলোর ওপর সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপের ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মতে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া প্রায় ৯৮৫ বিলিয়ন ডলার তেল ও গ্যাস বিক্রি করেছে।
এই জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন এবং ভারত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জ্বালানি কেনা নাটকীয়ভাবে হ্রাস করেছে, তবে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করেনি। ব্রাসেলস ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ান তেল কেনা অব্যাহত রাখার শাস্তি হিসেবে ভারত থেকে পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। তবে ভারত সরকার বলছে, তারা ভারতীয় জনগণের অর্থনৈতিক স্বার্থে তেল কেনার ‘সেরা চুক্তি’ অনুসরণ করবে। গত সপ্তাহে বেইজিংয়ে এক বৈঠকে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা চীনে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টক বেসেন্ট এনবিসির মিট দ্য প্রেসকে বলেছেন, “রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কেনা দেশগুলোর ওপর সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে আরো সমর্থন চাইছে।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি রাশিয়ান তেল কেনা দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সেকেন্ডারি শুল্ক বৃদ্ধি করে, তাহলে রাশিয়ার অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়বে এবং এটি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসবে।”