ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে টিএসসি কেন্দ্রের ক্যাফেটেরিয়া কক্ষে আগে থেকেই ‘ক্রস’ চিহ্ন দেওয়া একটি ব্যালট পেপার পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদপ্রার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। তবে এ ব্যাপারে শিবির সমর্থিত প্যানেল বলছে, এটি নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা একটি ষড়যন্ত্র।
রুপাইয়া মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, তিনি ও তার এক বান্ধবী একসঙ্গে ভোট দিতে যান। ভোটকেন্দ্রের এক নম্বর টেবিল থেকে বান্ধবীকে যে ব্যালট দেওয়া হয়, সেটিতে আগেই ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছিল শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এস এম ফরহাদের নামের পাশে।
বিষয়টি নিয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পোলিং কর্মকর্তাদের অবহিত করলে কর্মকর্তারা জানান, এটি ওই শিক্ষার্থীর ভুলও হতে পারে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত পোলিং কর্মকর্তা রুমানা পারভীন এ্যানী বলেন, “ওই শিক্ষার্থী ব্যালট নিয়ে বুথে প্রবেশ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেরিয়ে এসে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর আমরা সব ব্যালট পেপার পরীক্ষা করেছি, কিন্তু কোথাও কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরে অভিযোগকারীকে একটি নতুন ব্যালট দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি শিক্ষার্থীর ভুলও হতে পারে।”
তিনি আরো জানান, সকালে ব্যালট বাক্স খোলা ও সিলগালা করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সবার সামনে ব্যালট বিতরণ হওয়ায় কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে, শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম অভিযোগটিকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে বলেন, “একটা পক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়া বানচালের চেষ্টা করছে। একুশে হলে ছাত্রদলের পক্ষে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ব্যালট পাওয়ার খবর শোনা গেছে, এখন টিএসসিতেও একই অভিযোগ উঠছে। আমরা চাই, এ ধরনের কাজে যেসব কর্মকর্তা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় টিএসসি কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযোগটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রতিটি বুথ সিসিটিভির আওতায় রয়েছে। শিক্ষার্থী বুথে প্রবেশ করার পর অভিযোগ করায় বিষয়টি স্পষ্টভাবে যাচাইয়ের জন্য ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অভিযোগকারী ব্যালট হাতে নিয়েই অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান সম্ভব হত। কিন্তু বুথে প্রবেশ করার পর ফিরে এসে অভিযোগ করার সুযোগ নেই। তারপরও তাকে নতুন ব্যালট দেওয়া হয়েছে। ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমন অভিযোগ আনা হতে পারে।”
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুরে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে কর্মকর্তারা তাকে আশ্বস্ত করেন যে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় রিপোর্ট করার সময় ৩টা ১০ মিনিটে অনিয়মের অভিযোগ জানাতে এই মুহূর্তে সিনেট ভবনের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান।
নির্বাচন চলাকালে এ ধরনের ঘটনা ভোটের পরিবেশকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, যেকোনো অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত হবে এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করা হবে।