চীন ও ভারতের মাঝখানে অবস্থিত নেপালে ২০০৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ বার সরকার গঠন হয়েছে। এর মধ্যে কোনো সরকারই পাঁচ বছর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি। কিন্তু কেন?
১৯৫১ সালের আগে নেপাল বিভিন্ন বংশের রাজাদের দ্বারা শাসিত হতো। এর মধ্যে রানা শাসকেরা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যবস্থা চালু করে দেশ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের জোয়ারে রানা শাসন উৎখাত হয় এবং নেপালে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়।
১৯৬১ সালে রাজা মহেন্দ্র রাজনৈতিন দলগুলো নিষিদ্ধ করে দেন। এবং নিজের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে পঞ্চায়েত নামের একটা পরিচিত শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। কিন্তু এই ব্যবস্থার প্রতিও মানুষের ক্ষোভ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
১৯৯০ সালে নেপালের মানুষের ক্ষোভ চূড়ান্ত রূপ নেয়। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আন্দোলন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি করেন।
পিপলস মুভমেন্ট নামে পরিচিত এই আন্দোলনের মুখে রাজা বীরেন্দ্র রাজনৈতিক দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হন। এবং পঞ্চায়েত ব্যবস্থা তখন বিলুপ্ত হয়।
১৯৯৬ সালে নেপালের বামপন্থী মাওবাদীরা রাজতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে স্বসস্ত্র আন্দোলন শুরু করেন। এই সংঘাত টানা এক দশক ধরে চলে। এবং সতেরো হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
২০২৬ সালে সাধারণ মানুষ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। অবশেষে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র পুরোপুরি বিলুপ্ত হয় এবং নেপাল একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
২০১৫ সালে নেপাল একটি সংবিধান প্রণয়ন করে, এই সংবিধান অনুযায়ী গণতন্ত্রকে আরও দৃঢ় করার কথা থাকলেও সংবিধানের নানা ধারা এবং ক্ষমতা ভাগাভাগির নিয়ম মেনে দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব বেঁধে যায়। অনেক সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন, আস্থা ভোট কিংবা সাংবিধানিক ব্যাখ্যা নিয়েই তৈরি হয়েছে নানা সংকট, যা সরকার ভেঙে আবার গড়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। কেপি শর্মা অলি প্রথমবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন ২০১৫ সালে। তবে তার সরকার টিকেছিলো মাত্র ১ বছর। পরে তিনি টানা দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। যথাক্রমে ২০২৮ এবং ২০২১ সালে।
চতুর্থবার নির্বাচিত হন ২০২৪ সালে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘দলীয় স্বার্থ, ক্ষমতার লড়াই, সাংবিধানিতক অস্পষ্টতা ও আঞ্চলিক প্রভাব এগুলো মিলে নেপালের রাজনৈতি অস্থিরতাকে দীর্ঘায়িত করেছে।’’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিক্ষোভের কারণে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই মুহূর্তে দেশটির বাসিন্দাদের দৃষ্টি রাজধানী কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি