মোহাম্মদ ইসমাইল যে বাড়িটিকে নিরাপদ বলে মনে করেছিলেন, সেখানে বসে নিজের মেয়ের জন্য কাঁদছেন তিনি। কারণ ওই বাড়ি থেকেই ইসমাইলের মেয়েকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আট বছর আগে তারা যে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন সেখানে ফেরত পাঠানো হয়েছে তার মেয়েকে। অথচ সেই দেশে এখন তাদের সম্প্রদায়ের আনুষ্ঠানিকভাবে অস্তিত্ব নেই।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণহত্যা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ওই সহিংসতার সময় মোহাম্মদ এবং তার মেয়ে আসমা ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি ময়লা সংগ্রহের কাজ খুঁজে পান এবং আসমা রাজধানী নয়াদিল্লির ধুলোময় পাড়ায় স্কুলে যাওয়া শুরু করে। আসমার বয়স এখন ২০ বছর। গত মে মাসে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন আগে আসমা এবং শহরে বসবাসকারী আরো ৩৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ডেকে পাঠায়। কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের নতুন পরিচয়পত্রের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হবে। তারপর থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় আসমা ও ৩৯ জন রোহিঙ্গা।
তিন দিন পর, এক হাজার মাইলেরও বেশি দূরে একটি ফোন ধার করে আসমার সঙ্গী অন্য রোহিঙ্গারা তাদের স্বজনদের কাছে তাদের অস্তিত্বের কথা জানায়। তখন প্রকাশ পায় তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল। এই রোহিঙ্গাদের একটি বিমানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, জোর করে নৌকায় তোলা হয়েছিল এবং চোখ বেঁধে ভারত মহাসাগরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। তাদের নৌকা যে উপকূলে গিয়ে পৌঁছেছিল সেটি ছিল মিয়ানমারের।
ভারত, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে এবং বিমান ও জাহাজ চলাচলের তথ্য পর্যালোচনা করে সিএনএন-এর একটি তদন্তে দেখা গেছে, ভারত সরকার গোপনে ১৩ জন মহিলা এবং ২৭ জন পুরুষকে আটক করে মিয়ানমারে নির্বাসিত করেছে। এই কাজটি করা হয়েছে খোদ ভারতীয় আইন অমান্য করেই এবং তাদের এমন একটি দেশে পাঠিয়েছে যেখানে তারা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার।
সিএনএন এই তদন্ত চলাকালীন একাধিক ভারতীয় সরকারি বিভাগ এবং সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছিল কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি।
আসমা নিখোঁজ হওয়ার পর চার মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে এবং ইসমাইল তার কোনো খবর পাননি। তার বিয়ের জন্য কেনা পোশাক, গয়না এবং আসবাবপত্র দেখে তিনি বুঝতে পারছেন না যে কেন মেয়েকে সেদিন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তাকে নেওয়া হয়নি।
ইসমাইল বলেন, “আমি কখনও কোনো ভুল করিনি, আমি এখানে আশ্রয় নিতে এসেছি... তারা কীভাবে আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে? যদি তাদের আমাদের নির্বাসন দিতেই হত, তাহলে একসাথে আমাদের নির্বাসন দেওয়া উচিত ছিল।”