কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, “লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীনের চলে যাওয়ার ক্ষতি পূরণ হবার নয়। তিনি একটা ধারা তৈরি করে দিয়েছেন। যেই ধারা থেকে আমরা গড়ে উঠেছি।”
তিনি বলেন, “ফরিদা পারভীনের চলে যাওয়া কুষ্টিয়াবাসীর জন্য সত্যিকার অর্থেই দুঃখের দিন। কুষ্টিয়াকে সত্যিকার অর্থেই আমরা সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এটা হবে উপমহাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক নগরী। সেই ভিত্তিটা ফরিদা পারভীন তৈরি করে গেছেন।”
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে শিল্পী ফরিদা পারভীনের দাফন শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
ফরহাদ মাজহার বলেন, “ফরিদা পারভীনকে শুধু শিল্পী বললে অন্যায় হবে। তার অবদান শিল্পী হিসেবে নয়, তিনি ফকির লালন শাহকে পরিচিত করেছেন সারা বাংলাদেশে, এই উপমহাদেশে এবং বিশ্বে। আগে আমরা একজন ফকির সম্পর্কে জানতাম, তার গান পল্লীগীতি হিসেবে শুনতাম।”
তিনি বলেন, “আব্দুল আলীম পল্লীগীতি হিসেবে তার গানগুলো গাইতেন, আমরাও সেভাবেই শুনতাম। ফরিদা যখন গাইলেন, প্রথম বুঝলাম, আমরা একজন সাধকের গান শুনছি। বাংলার ভাবজগতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষের চমৎকার গান শুনছি। এই কাজটা ফরিদা করেছেন, তিনিই প্রথম করেছেন। প্রথম যিনি করেন, তার অবদানটা অসামান্য হয়।”
ফরিদা পারভীনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্থানের খাদেম নুরু। তিনি বলেন, “শিল্পী ফরিদা পারভীনের বাবা কুষ্টিয়া হাসপাতালে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে ছোটবেলায় তিনি কুষ্টিয়ায় বেড়ে উঠেছেন। আমরা একই এলাকার মানুষ ছিলাম। ছোটবেলায় আমরা ফরিদা পারভীনের সঙ্গে খেলাধুলা করতাম। সমবয়সী হওয়ায় আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। বড় হওয়ার পর তিনি কুষ্টিয়ার বাইরে চলে যান, এজন্য যোগাযোগ ছিল না। তবে, দেখা হলে আমাদের কথা হতো।’
শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
ফরিদা পারভীনের জন্ম নাটোরে হলেও শৈশব-কৈশোরের অনেকটা সময়ই কেটেছে কুষ্টিয়ায়। এছাড়া, লালনের গান করায় শিল্পীর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে শহরটিতে।