সারা বাংলা

কিশোরগঞ্জে কালীবাড়ী প্রাঙ্গণে মহালয়ার অনাড়ম্বর আয়োজন

‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমঃ নমঃ’- শ্রীচণ্ডীর এ শ্লোক উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে শ্রী শ্রী কালিবাড়ি কিশোরগঞ্জের আয়োজনে দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার আগমনী আরাধনা- শুভ মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে মা দুর্গার আগমনী বার্তায় এ আয়োজন করা হয়। এসময় শত শত দর্শনার্থী ও ভক্ত উপস্থিত ছিলেন কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে।

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্খ ধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় মহালয়ার প্রথম পর্ব। এরপর চন্ডিপাঠ, সমবেত সঙ্গীত, মাতৃ বন্দনা, সমবেত নৃত্য ও মহিষাসুর মর্দিনী- নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়। মায়ের আগমনী বার্তা মহালয়ার এমন মনোমুগ্ধকর আয়োজনে ভক্তরা অনেক খুশি।

নৃত্য পরিচালক ধনেশ পণ্ডিত বলেন, “মায়ের আগমনীতে আমাদের এমন আয়োজন সকলের মাঝেই একটি বার্তা পৌছে দেয়। সেটি হচ্ছে, সকলের মাঝে সৌহার্দ্যতা-ভালোবাসা আর সংস্কৃতির সম্প্রীতি। মায়ের আগমনীবার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আমরাও অনেক খুশি হই। আমাদের এবারের আয়োজনে মহিষাসুর মর্দিনী- নৃত্যনাট্য দিয়েই মহালয়ার পর্ব শেষ হবে।”

শ্রী শ্রী কালীবাড়ির সভাপতি অসীম সরকার বাধন বলেন, “গত দুই বছর ধরে আমরা মহালয়ার আয়োজন করে আসছি। এবছর আরো অনাড়ম্বরভাবে মহালয়ার আয়োজনে করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সমাগম হয়। ভক্তরা ভোর থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হন। জেলার শতাধিক শিল্পী স্বেচ্ছায় অংশ নিয়ে এই অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।”

আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। মহালয়া উপলক্ষে মন্দির ও পূজা কমিটিগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

মহালয়ার ছয় দিন পর আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শ্রী শ্রী দুর্গাষষ্ঠী। এর মাধ্যমেই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজা শুরু হবে। সেদিন দেবী দুর্গার ষষ্ঠাদি কল্পনারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা হবে। সেই সঙ্গে হবে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। দুর্গোৎসবে ২৯ সেপ্টেম্বর হবে মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী।

শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া। এদিন আরো কিছু ধর্মীয় রীতি পালিত হতে দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো মৃত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা। গঙ্গাতীরে দেখা যায় এমন আয়োজন। এ ছাড়া মন্দিরে মন্দিরে বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি। পুরোহিতদের শান্ত, অবিচল গম্ভীর কণ্ঠে শোনা যায় চণ্ডীপাঠ। এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে দেবতারা দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। তারা সমস্বরে দেবীকে আহ্বান জানান পৃথিবীর ঘোর অন্ধকার দূরীভূত করে মঙ্গল প্রতিষ্ঠায়। মহালয়ার সময় ঘোর অমাবস্যা থাকে। মহাতেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়। প্রতিষ্ঠা পায় শুভশক্তি।

দেবী দুর্গা দুর্গতিনাশিনী। হিন্দু সম্প্রদায় তাকে মহাশক্তির একটি রূপ মনে করেন। দেবী দুর্গার অনেকগুলি হাত। তার অষ্টাদশভূজা, ষোড়শভূজা, দশভূজা, অষ্টভূজা ও চতুর্ভূজা মূর্তিও দেখা যায়। তবে দশভূজা রূপটিই বেশি জনপ্রিয়। হিন্দুধর্মে দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। হিন্দু পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতী, কার্তিক ও গণেশের জননী এবং কালীর অন্যরূপ।

এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।