সারা বাংলা

জলাবদ্ধ ভবদহে নেই দুর্গাপূজার আমেজ

টানা চার মাসের বেশি সময় ধরে জলাবদ্ধ হয়ে আছে যশোরের ভবদহ অঞ্চল। নিরানন্দ পরিবেশে সামর্থ্য অনুযায়ী চলছে দেবী দুর্গাকে বরণ করার প্রস্তুতি। দুর্দশায় দিন পার করা পানিবন্দি ভবদহবাসী সাধ্যমতো চেষ্টা করছে ধর্মীয় রীতি রক্ষার। তবে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজায় যে উদ্দীপনা ও আমেজ থাকে, তা নেই ভবদহ অঞ্চলে।

চারিদিকে থৈ থৈ পানি। ভালোভাবে হাঁটা-চলারও উপায় নেই। এ অবস্থায় মানুষের বাইরে বের হওয়া দুষ্কর। আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে সবার। এরইমধ্য আয়োজন করতে হচ্ছে দুর্গাপূজার। কীভাবে পূজা হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই ভবদহ অঞ্চলের লক্ষাধিক হিন্দু পরিবারের। তারপরও আশায় বুক বেঁধে থৈ থৈ পানির মধ্যেই মণ্ডপ প্রতিষ্ঠা করে উৎসব উদযাপনের চেষ্টা করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

টানা বৃষ্টিপাতে যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জলাবদ্ধতার কারণে ভবদহ অঞ্চলে দুর্গাপূজার আনন্দ অনেকটাই ম্লান। আগেই ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মন্দির। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য দৈনন্দিন পূজা করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাড়ি ছেড়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে শত শত পরিবার। বন্ধ হয়ে গেছে রোজগারের সকল পথ। মানুষের ঘরে ঘরে এখন কেবল হাহাকার আর চাপা কান্না।এমন প

রিস্থিতির মধ্যে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। মহালয়ার মধ্যে দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়ে ২ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে তা শেষ হবে। তবে, এ উপলক্ষে উৎসবের কোনো আমেজ নেই ভবদহ অঞ্চলের প্রেমবাগ, সুন্দলী, পায়রা ও চলিশিয়া ইউনিয়নের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি ও সীমাহীন দুর্ভোগ উৎসবের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। দু‘মুঠো ভাত জোগাড় করা যেখানে চরম আরাধ্য; উৎসব সেখানে বিলাসিতা বলে জানিয়েছেন পানিবন্দি মানুষ।

উপজেলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, অভয়নগরে অনেক মন্দির প্রাঙ্গণ পানিতে তলিয়ে গেছে। পূজা-অর্চনা করার মতো পরিবেশ নেই অনেক মন্দিরে। যেসব স্থানে মেলা বসে, সেখানে এখনো কোমরসমান পানি।

অভয়নগরে এ বছর ১২৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিহাটি গ্রামের বাসিন্দা সোমনাথ বিশ্বাস বলেছেন, এক মাস ধরে আয়-রোজগার বন্ধ। মাছ ধরে তা বিক্রি করে কোনোমতে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছি। পূজা উৎসব আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য নয়।

চলিশিয়া ইউনিয়নের বলারাবাদ গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, আমাদের কোনো পূজার আনন্দ নেই। পূজার সময় ছেলেমেয়েদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতে পারছি না। পানিও সরছে না। আমাদের কষ্ট দেখার আসলে কেউ নেই।

সুন্দলী সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির কমিটির সভাপতি উজ্বল বিশ্বাস বলেছেন, কোনোরকমে মায়ের পূজা শুরু করেছি আমরা। সরকারি সামান্য অনুদানে আর গ্রামবাসীর অল্প অল্প প্রণামির টাকায় আমাদের এ আয়োজন। এ কারণে পূজা শেষ করাটাই বড় কষ্টের।

ভবদহ পানি নিষ্কাষণ সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেছেন, ভবদহ অঞ্চল হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল। এ জনপদে বড় করে দুর্গাপূজা করতে না পারাটা দুঃখজনক। আর কত কাল এ জনপদের মানুষকে সাপ আর ব্যাঙের মতো বসবাস করতে হবে।

যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, ভবদহের বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসবের আনন্দ নেই। তারা বাঁচতে চান। সরকারিভাবে নানা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সঙ্গে টিআরএম চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কার করতে হবে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেছেন, গতবারের তুলনায় এবার জলাবদ্ধতা কম। দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুতই ভবদহ অঞ্চলের পাঁচটি নদী পুনঃখনন করবে সেনাবাহিনী। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে।