ঘরের মাঠে নতুন মৌসুমের প্রথম টেস্টেই ভারত যেন জানিয়ে দিল- তিন কিংবদন্তির অবসর, আগের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারের ক্ষত বা দলের রূপান্তর; এসবই পেছনের গল্প। নতুন গল্প শুরু হয়েছে আক্রমণাত্মক ছন্দে। হায়দরাবাদের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৬০ রানে গুটিয়ে দেয় ভারত। এরপর ২ উইকেটে ১২১ রান তুলে দিনের শেষে ৪১ রানের লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ে তারা।
ইংল্যান্ড সফরের ‘আয়রন ম্যান’ মোহাম্মদ সিরাজ আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি ভারতের আক্রমণের সামনের কাতারের সেনাপতি। বল বারবার ফুল লেংথে ফেলে উইকেট নিশানা করেছেন, একটুও ছাড় দেননি ক্যারিবীয় ব্যাটারদের। ইনিংসের প্রথম পাঁচ উইকেটের মধ্যে চারটিই এসেছে তার হাতে। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ঘরের মাঠে প্রথমবার পাঁচ উইকেট পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু ডিআরএসে তা হাতছাড়া হয়। শেষ পর্যন্ত তার শিকার ৪০ রানে ৪ উইকেট।
অন্যপ্রান্তে জসপ্রিত বুমরাহ যোগ দিলেন ইয়র্কারের ঝলকানি নিয়ে। জাস্টিন গ্রিভসকে এলবিডব্লিউ আউট করতে না পারলেও দ্রুতই লেজের ব্যাটসম্যানদের দিশেহারা করেন। আর এদিনই তিনি রেকর্ড গড়েন। ভারতে সবচেয়ে কম বল করে ৫০ টেস্ট উইকেট পাওয়া বোলার এখন বুমরাহ (মোহাম্মদ শামির চেয়ে ৫২১ বল আগে)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং লাইনআপে নাম আছে, কিন্তু রান নেই। একাদশে মোট নয়টি টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু তার ছাপ পড়েনি মাঠে। ওপেনার ত্যাগনারায়ণ চন্দরপল শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে, ব্র্যান্ডন কিং সোজা বল ছেড়ে মধ্যস্টাম্প হারালেন। আলিক আথানাজ কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হচ্ছিলেন। কিন্তু সিরাজ তার অভিজ্ঞতার ঘাটতি চমৎকারভাবে কাজে লাগালেন। সামান্য ফুল বলের লোভে স্লিপে ক্যাচ দিলেন আথানাজ।
কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন রোস্টন চেজ ও শাই হোপ। ৭০ বল টিকে ছিলেন তারা। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট হয়নি। কুলদীপ যাদবের দুর্দান্ত ড্রিফট আর টার্নে বোল্ড হন হোপ। আর চেজকে ফাঁদে ফেলে সিরাজের দারুণ অ্যাঙ্গেলে আসা বল, উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ বানিয়ে।
বল হাতে সিরাজ নেন ৪০ রানে ৪টি উইকেট। বুমরাহ ৪২ রানে ৩টি। আর কুলদীপ যাদব ২৫ রানেন নেন ২টি উইকেট। অপর উইকেটটি শিকার করেন ওয়াশিংটন সুন্দর।
১৬০ রানের স্বল্প স্কোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুটিয়ে দিয়ে সহজ দিনটা ভারত আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারত। ৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পর যশস্বী জয়সওয়াল ৭ চারে ৩৬ করে আউট হন। এরপর ৯০ রানের মাথায় নতুন তিন নম্বর সাই সুদর্শন মাত্র ৭ রানে ফিরলেন। এখানেই বোঝা গেল, রোহিত-কোহলি-অশ্বিন-পন্তহীন এই দলে রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
তবে চাপ সামলালেন লোকেশ রাহুল। নির্ভার, ব্যস্তহীন অর্ধশতক তুলে নিয়ে দলের ব্যাটিংকে স্থিতি দিলেন তিনি। শুভমান গিল অপরাজিত থাকেন ১৮ রানে। তাদের ব্যাটিংয়েই দিনের শেষে ভারত লিড ধরে রাখল ৪১ রানে।