সারা বাংলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ দিন ধরে বন্ধ টিকাসেবা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাজুড়ে গত পাঁচ দিন ধরে টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।

ছয় দাবি আদায়ে জেলার ২১৮ স্বাস্থ্যকর্মী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করায় বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিশুদের অভিভাবকরা সন্তানদের সময়মতো টিকা দিতে না পেরে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্মবিরতিতে রয়েছেন ১৩ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৪২ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১৬৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় চারজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১২ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ৫১ জন স্বাস্থ্য সহকারী কর্মবিরতি পালন করছেন। শিবগঞ্জে আন্দোলনে আছেন চারজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১৬ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ৫৪ জন স্বাস্থ্য সহকারী। 

গোমস্তাপুরে তিনজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, আটজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও ৩৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী তাদের কাজ বন্ধ রেখেছেন। নাচোল উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, তিনজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী কর্মবিরতিতে রয়েছেন। সবশেষ ভোলাহাট উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, তিনজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১২জন স্বাস্থ্য সহকারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাইমুনা খাতুন জানান, রবিবার (৫ অক্টোবর) তার ৩ মাস বয়নী ছেলে আহনাফ আবিদের ইপিআই টিকা দেওয়ার দিন ছিল। টিকা না পেয়ে তিনি কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন। 

স্বাস্থ্য কর্মীদের এমন কর্মবিরতির কথা জানা ছিল না আরও অনেকেরই। তারাও কেন্দ্রে এসে সন্তানদের টিকা দিতে না পেরে ফেরত গেছেন। 

আন্দোলনকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের প্রাণঘাতী ১০টি রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে কাজ করলেও তারা এখনো টেকনিক্যাল পদমর্যাদা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে তারা সরকারি অন্যান্য কর্মচারীর তুলনায় বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সচিব ও মহাপরিচালক এবং ২০২০  তাদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. কামাল উদ্দীন বলেন, “আমাদের দাবি টেকনিক্যাল পদমর্যাদা। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেলেও তা এখন বাস্তবায়ন হয়নি। বাধ্য হয়েই আমরা মাঠে নেমেছি।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, “গত ৫ দিন ধরে আমরা আমাদের নায্য দাবি আদায়ের জন্য অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছি। আমাদের কর্মবিরতির ফলে ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আসন্ন টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইনের রেজিস্টেশনও বন্ধ করে দিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো কাজ করব না।” 

তিনি বলেন, “বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, নিয়োগবিধি সংশোধন, টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান, শিক্ষাগত যোগ্যতায় স্নাতক ও বিজ্ঞান সংযোজন, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমার মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি ও পদোন্নতিতে ধারাবাহিক উচ্চ গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে।” 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন একেএম শাহাব উদ্দিন বলেন, “জেলার স্বাস্থ্য সহকারীরা কর্মবিরতি পালন করায় ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি একেবারেই বন্ধ। টিকা না পেয়ে কেন্দ্র থেকে ফিরে যাচ্ছে মানুষ। টাইফয়েড টিকা (টিসিভি) ক্যাম্পেইনের আগে তারা যদি কর্মস্থলে না ফেরেন তাহলে সরকারি এই উদ্যোগটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”