প্রতিদিন সকাল হলেই দিনাজপুরের দশমাইল মহাসড়কের পাশে বসে উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ পাইকারি কলার হাট। ভোর থেকে জেলার কয়েকটি উপজেলা থেকে কলা চাষিরা কলা আনেন এই হাটে।
ভ্যানে, অটোরিকশায়, পিকআপ আর বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে হাটে নিয়ে আসে কাঁচা কলার কাঁদি। ঢাকা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁচা কলার পাইকাররা এসব কলা কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান। এই হাটকে ঘিরে হয়েছে কয়েকশ’ মানুষের কর্মসংস্থান।
জেলার কাহারোল উপজেলার দশমাইল কলার হাটটি উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। কৃষক, পাইকার, শ্রমিকসহ অনেকেই এই হাটকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার কলা বেচাকেনা হয়। হাটটি এখন জেলার কৃষি ও অর্থনীতির এক শক্তিশালী প্রাণকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে ট্রাকভর্তি এসব কলা। এই হাটের বেশিরভাগ কলাই হচ্ছে সাগর কলা, কিছু রয়েছে সবরি বা মালভোগ জাতের কলা। হাটে সারি সারি কলার কাঁদি সাজিয়ে রাখেন চাষিরা।
শ্রমিক রেজাউল করিম বলেন, “আমরা অনেকেই আগে বেকার ছিলাম। এখন এই কলার হাটে কাজ করে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করছি। এতে সংসারের খরচ চালানো সহজ হচ্ছে।”
উপজেলার নারায়েত পুর গ্রামের কলা চাষি তারিকুল ইসলাম বলেন, “আমি দুই বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। আজ একশ কাঁদি কলা ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এভাবে দাম পেলে ভালোই লাভ হবে।”
কলা চাষি ফরিদুল ইসলাম বলেন, “প্রতি কাঁদি ৪৯০ থেকে ৫২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। চার বিঘা জমির দুইটি বাগানে কলা বিক্রি করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি আয় হবে আশা করছি।”
ঢাকা থেকে আসা পাইকার হাফিজ উদ্দীন তালুকদার বলেন, “আমি প্রতিদিন তিন ট্রাক কলা কিনে ঢাকায় নিয়ে যাই। চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসা ভালোই চলছে।”
ফেনী থেকে আসা পাইকার মনসুর আলী বলেন, “এক মাস আগে দাম বেশি ছিল। এখন সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবুও কৃষকেরা ভালো লাভ করছেন।”
কাহারোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মল্লিকা রানী সেহানবীশ জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার ৩২৫ হেক্টর জমিতে কলাচাষ হয়েছে। কলা একটি লাভজনক ফসল। আমরা চাষিদের কলার রোগবালাইসহ সার্বিক পরামর্শ দিয়ে আসছি। আশা করছি ভাল ফলনসহ কৃষকরা কলার ন্যায্য মূল্য পাবেন।