বাংলাদেশের প্লেব্যাক ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র খুরশীদ আলম। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চার শতাধিক কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। সম্প্রতি রাহাত সাইফুলের সঞ্চালনায় ‘রাইজিংবিডি স্পেশাল’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে হাজির হন তিনি। সেখানেই তিনি বর্তমান প্রজন্মের শিল্পী ও সংগীতজগতের অবস্থা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
রিয়েলিটি শো থেকে উঠে আসা কণ্ঠশিল্পী নোবেল সম্পর্কে মতামত দিতে গিয়ে খুরশীদ আলম বলেন, “নোবেল বিতর্কিত একজন লোক। ওর সঙ্গে আমার সরাসরি যোগাযোগ নেই, তবে যেটুকু শুনেছি—তার মধ্যে ট্যালেন্ট ছিল। যখন দেখতাম ও আইয়ুব বাচ্চুর গান করছে, তখনও শ্রদ্ধার ঘাটতি ছিল। একজন শিল্পীর উচিত সুরকার ও গীতিকারের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করা। নোবেলের ভয়েস অবশ্যই সুন্দর।”
নোবেলকে কোনো পরামর্শ দিতে চান কি না, জানতে চাইলে এই গুণী শিল্পী বলেন, “উনাকে পরামর্শ দেওয়ার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে বলতে চাই, এখনকার প্রজন্মের শিল্পীদের একটা বড় সমস্যা আছে—তাদের কোনো অভিভাবক নেই। আমাদের সময়ে একজন শিল্পীর অন্তত ১৫-২০ জন অভিভাবক থাকতেন, যারা দিক-নির্দেশনা দিতেন। এখন শিল্পীদের উপদেশ দেওয়ার কেউ নেই, সংগঠন নেই, বসার জায়গা নেই। অথচ রিকশাচালকদেরও সংগঠন আছে।”
বর্তমান সংগীতজগতের হিংসা-বিদ্বেষ নিয়ে তিনি বলেন, “গানবাজনা এমন একটা জায়গা, যেখানে একজনের উন্নতি আরেকজন সহ্য করতে পারে না। আমাদের সময়ও ছিল। কিন্তু এতটা প্রকাশ্য বা ন্যাক্কারজনকভাবে ছিল না।”
স্মৃতিচারণ করে খুরশীদ আলম বলেন, “আমাদের সময়ে সবাই মিলে কাজ করতাম—হারলে-জিতলে একসঙ্গে। তখনকার গীতিকাররাও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন কোন শিল্পীর কণ্ঠে গানটি ভালো হবে। এখন দেখা যায়—গায়কই গীতিকার, গায়কই সুরকার। হয় না যে তা নয়, তবে আমি মনে করি, পরামর্শ নেওয়া জরুরি।”
সংগীতের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা থেকেই খুরশীদ আলম আজও স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না।
বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন খুরশীদ আলম। তার কণ্ঠে অমর হয়ে আছে—‘মাগো মা ওগো মা’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘যদি বউ সাজো গো’, ‘চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে’, ‘চুরি করেছো আমার মনটা’ প্রভৃতি।