জাতীয়

ভূমি অফিসকে আস্থার প্রতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে: সিনিয়র সচিব

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএস এম সালেহ আহমেদ বলেছেন, “একটি দেশের অর্থনীতি, কৃষি, বসতি ও শিল্পের মূল ভিত্তি হলো ভূমি। তাই ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি সেবা জনগণের জীবনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। এই ভূমি ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করার জন্য সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনের ভাবমূর্তি  ধরে রাখতে এক্ষেত্রে নীতি নৈতিকতা ও সততার সাথে কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেনো বলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘুষ খায় না, হয়রানি করে না। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান দিয়ে জনসেবার  মানসিকতা নিয়ে নির্ধারিত সময়ে সেবাগ্রহীতাদের সেবা প্রদানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে জনগণের ভরসাস্থল ভূমি অফিস,সেই ভূমি অফিসকে মানুষের আস্থার প্রতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (এলএটিসি) নবনিযুক্ত সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) ‘৪৫ ও ৪৬’তম বেসিক ভূমি ব্যবস্থাপনা কোর্স এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পাঁচ সপ্তাহব্যাপী এই প্রশিক্ষণে মোট ১০০ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।

সিনিয়র সচিব বলেন, “ভূমি নিয়ে সমস্যা বেশি অভিযোগও বেশি এই সমস্যা ও অভিযোগ দুটই ম্যানেজ করতে হবে আইন ও ন্যায়ের দ্বারা। নিজেদের জনবান্ধব হিসেবে তুলে ধরতে হবে। নিজের কর্মস্থলে লিডারসিপ নিতে হবে। সব সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সব বিষয় জানতে হয়। বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। অনেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনবান্ধব সেবা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের কাছে সুপরিচতি হয়েছে। তাদের অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় প্রশাসন ক্যাডারের অস্তিত্ব ভূলুণ্ঠিত হবে। মানষিক চিন্তার উন্নয়ন ঘটাতে হবে, মননে পরিবর্তন আনতে হবে। কোনোভাবে বেআইনি পথে পা বাড়ানো যাবে না। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে, কাজ করতে বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায়।”

তিনি আরো বলেন, “ভূমির শতভাগ সেবা অনলাইনে কার হয়েছে, কিন্তু জনগণ অনলাইনে সেভাবে সেবা গ্রহণে অভ্যস্থ নয়, তাদের দায়িত্বও নিতে হবে। নাগরিকদের সুবিধার জন্য সাহসিকতার সাথে কাজ করতে হবে। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের ওপর জাতির একটি বড় নির্ভরতা ও আস্থা রয়েছে, যা দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই ক্যাডার কর্মকর্তারা জনগণের সেবা, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের প্রতি তাদের আস্থা ও নির্ভরতা প্রকাশ করে। ভবিষতে সহকারী কমিশনাদের কর্মক্ষেত্রে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মাঠ প্রশাসনকে সমৃদ্ধ করবে।”

সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) স্বত্বলিপি প্রণয়ন, জমা খারিজ ও জমা একত্রীকরণের মাধ্যমে খতিয়ান সংশোধন, সিকস্তি পয়স্তি জমির ব্যবস্থাপনা এবং রেকর্ড হালকরণ, সায়রাত মহাল ব্যবস্থাপনা, দেওয়ানী মামলা ব্যবস্থাপনা, সরকারি পাওনা আদায় ব্যবস্থাপনা, অর্পিত সম্পত্তি/খাস জমি ব্যবস্থাপনা-খাসজমি চিহ্নিতকরণ, অর্পিত সম্পত্তি/খাসজমি উদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণ, এল.এ কেসের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এই সংক্রান্ত ভূমি ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারসমূহ হালকরণ করতে হয়। তাই সরকারি স্বার্থ রক্ষার জন্য এই কোর্সের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সকল আইন, বিধি, ম্যানুয়াল, পরিপত্র ও অন্যান্য বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ নির্দেশনা সম্পর্কে কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এজেএম সালাহউদ্দিন নাগরী, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) সাইদুর রহমান ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এমদাদুল হক চৌধুরী। 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এলএটিসি) এর উপ-পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) খান এ সবুর খান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (এলএটিসি) পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রুমানা রহমান শম্পা।