সারা বাংলা

খেতুরে এবার ব্যাপক দর্শনার্থী সমাগম, দীর্ঘ যানজট

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুরে শ্রী শ্রী নরোত্তম দাস ঠাকুরের তিরোভাব তিথি মহোৎসবে দর্শনার্থীরা ভিড় করেছেন। সারাদেশ থেকে ১৫ লাখেরও বেশি বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী এসেছেন বলে জানিয়েছেন গৌরাঙ্গদেবের ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি বিদ্যুৎ নারায়ণ সরকার।

তিনি বলেন, ‘‘এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা রেকর্ডসংখ্যক বেশি। আমরা ধারণা করছি, ১৫ লাখেরও বেশি ভক্ত-অনুসারী এসেছেন। এত সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন অতীতে কখনো দেখিনি। তবে সুন্দরভাবেই উৎসব হচ্ছে। রাস্তাঘাটে যানজট ছাড়া কোথাও খারাপ কিছু ঘটেনি।’’ 

বিশ্বজুড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মোট ছয়টি ধাম রয়েছে। এর পাঁচটিই ভারতবর্ষে। এর একটি এই খেতুরীধাম। ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে গোদাগাড়ীর গোপালপুর পরগণার রাজা কৃষ্ণানন্দ দত্তের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন নরোত্তম। দিনে দিনে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অহিংস সাধকের এক প্রতীক। বৈষ্ণবদের বিশ্বাস, চৈতন্যদেবের আহ্বানে আবির্ভাব হয়েছিল তার।

নরোত্তম খেতুরে শ্রীগৌরাঙ্গ, শ্রীবল্লবীকান্ত, শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীব্রজমোহন, শ্রীরাধামোহন ও শ্রীরাধাকান্ত এই ছয়টি শ্রীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের লোকদের এখানে আমন্ত্রণ জানানো হতো। সে সময় শীর্ষস্থানীয় আচার্য, বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি, গায়ক, বাদকসহ নানা পেশার মানুষ আসতেন। বৈষ্ণবসাহিত্যে এই উৎসব খেতুরীর মহোৎসব নামে পরিচিত। নরোত্তম পৃথিবীতে ছিলেন ১৬১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

এখন নরোত্তম দাস ঠাকুর না থাকলেও চার শতাব্দী ধরে খেতুরে অনুষ্ঠান হয়। এখন সেটা ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব। দুর্গাপূজার পর তার স্মৃতিবিজড়িত এলাকায় ছুটে আসেন বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা। তিন দিনের এ অনুষ্ঠান ঘিরে বসে গ্রামীণ মেলা। এবার শুক্রবার (১০ অক্টোবর) থেকে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। শেষ হবে রবিবার (১২ অক্টোবর)। 

এবার প্রচুর পরিমাণে দর্শনার্থীর আগমন হওয়ায় গোদাগাড়ীর রাজাবাড়িহাট থেকে বসন্তপুর ও বিজয়নগর থেকে প্রেমতলী বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এই যানজট ঠেলে শনিবার (১১ অক্টোবর) সেখানে গিয়ে নরোত্তমের অনুসারীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মহিনুল হাসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ ও সহকারী কমিশনার সেহরীন তাবাসসুম তিথী। শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন ও সুলতানুল ইসলাম তারেকও।

গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘‘উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছেন। কিন্তু এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা এত বেশি যে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’