নোয়াখালীতে চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপি নেতা আবদুল কাদের জসিমের পুনরায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এতে আসামির অনুসারীরা আদালত চত্বরে বাদীপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিনের উপর হামলার চেষ্টা করে। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের বাধা দেয় তারা।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) জেলা ও দায়রা জজ ড. মোরশেদ ইমতিয়াজের আদালত শুনানি শেষে আসামিকে পুনরায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জামিন নামঞ্জুরের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার সময় আসামিপক্ষের অনুসারীরা তার উপর চড়াও হয়। এ সময় তারা সংবাদ সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘‘আসামির জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় তার অনুসারী সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার উপর চড়াও হয়। এ সময় আমি গণমাধ্যমে কথা বলতে গেলে তারা সাংবাদিকদের কাজেও বাধা সৃষ্টি করে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘কবিরহাট উপজেলার সৌদি প্রবাসী ভুক্তভোগী মহিউদ্দিন আসামির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরপর আসামিরা হাজির না হলে বিজ্ঞ আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তীতে আসামিরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। গত ৫ অক্টোবর তারা নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে পিবিআইর তদন্ত সাপেক্ষে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) আসামি পক্ষ পুনরায় জামিন আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে আসামির পুনরায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’’
আসামি আবদুল কাদের জসিম নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নে সৌদি প্রবাসী মহিউদ্দিনের পরিবারের কাছে প্রভাব খাটিয়ে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন জসিম। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় মহিউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। গত ১ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেতা জসিমের দুই সহযোগী প্রবাসীর বাড়ি থেকে চাঁদাবাজির ২০ হাজার টাকা নেয়। ওই টাকা গ্রহণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখে ভুক্তভোগী পরিবার।
এরপর বিএনপি নেতা জসিম বাকি ৮০ হাজার টাকা তার সহযোগীদের দিতে প্রবাসী পরিবারকে মুঠোফোনে চাপ প্রয়োগ করেন। গত ৭ মার্চ বিএনপি নেতা জসিমের চাঁদাবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা বিএনপি তাকে বাটাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহিত দেয়। পরে অবশ্য সেই অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় প্রবাসী বাদী হয়ে মামলা করেন।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই'র পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, ‘‘বিএনপি নেতা জসিম, তার সহযোগী সহিদ উল্যাহ সুজন এবং জাহাঙ্গীর আলম পরস্পর যোগসাজশে জোরপূর্বক টাকা গ্রহণ, প্রাণে হত্যার হুমকি প্রদান, চাঁদা দাবি এবং দাবিকৃত চাঁদা আদায়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’’
ভুক্তভোগী প্রবাসীর ছোট ভাই অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আসামি জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় কারাগারে বসে তার অনুসারী সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করছেন। এমনকি হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছেন। এতে পরিবারের নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’’
নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো বলেন, ‘‘স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের অনুরোধে বিএনপি নেতা জসিমের অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়। তাকে বিচারক একটি মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’’