খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। গত ডিসেম্বরেই বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ মুখোমুখি হয়েছিল ওয়ানডেতে। ফলাফল বাংলাদেশ ০: ৩ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যর্থতার সেই রেলগাড়ি এখনও চলছে বাংলাদেশের। এ বছর ৮ ওয়ানডেতে মাত্র ১ জয় বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও খুব ভালো অবস্থায় আছে বলা যাবে না। ৯ ম্যাচে তাদের জয় ৩টিতে। দুই দলের জন্য মিরপুরে তিন ম্যাচের সিরিজ নিশ্চিতভাবেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেই মিশন শুরু হচ্ছে আগামীকাল শনিবার দুপুর দেড়টায়।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়ে আসা বাংলাদেশ ঘরের মাঠে আঁধার কাটিয়ে আলোর অপেক্ষায়। যেই ওয়ানডে ক্রিকেট ছিল বাংলাদেশের গর্বের জায়গা। সেখানেই এখন বাংলাদেশ খাবি খাচ্ছে। পরাজয়ের স্তুপে সরে গেছে জয়ের সৌধ। সেখানেই এখন নতুন মাটির সন্ধানে বাংলাদেশ। আফগানিস্তান সিরিজের ব্যর্থতা ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় বাংলাদেশের।
কোচ ফিল সিমন্স মনে করছেন, একটি সিরিজ জয়ই বাংলাদেশকে পুরোনো অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারে, ‘‘কোনো সংস্করণ খেলতে ভুলে যাওয়ার ব্যাপার এটি নয়। স্রেফ একটি বাজে সিরিজ গিয়েছে আমাদের।’’
বাংলাদেশের ব্যর্থতার বড় কারণ ব্যাটিং। শেষ ৩ ওয়ানডের একটিতেও পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি দল। সিমন্সের সব নজর এখন ব্যাটিংয়ের দিকেই, ‘‘আমরা ভালো জুটি গড়তে পারিনি, বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোয়। শুরুতে জুটি হয়েছে, মিডল অর্ডার ভেঙে পড়েছে। শ্রীলঙ্কাতেও (আগের সফরে) কিছুটা দেখেছি আমরা, সহজেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমরা। এরপর একটি রান আউট এবং দ্রুতই আমরা ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলি। ব্যাপারটি তাই এটি উপলব্ধি করার যে, মাঝের সময়টায় আমাদের জুটি গড়তে হবে এবং ছেলেরা এখানেই কাজ করার চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব। একটি বাজে সিরিজ আমাদের গিয়েছে এবং মানছি যে, ব্যাটাসম্যানরা খারাপ করেছে। তবে শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে আমাদের।”
তবে মাঠের ফলাফল আর কাগজ-কলমে, শক্তিমত্ত্বায় দলটি একেবারেই আলাদা বলে দাবি করলেন সিমন্স, ‘‘এরকম একটি সিরিজের পর যেটা করা যায়, সেটা হলো এটাকে পেছনে ফেলার যতটা সম্ভব চেষ্টা করা। কারণ আমরা জানি, আমরা এর চেয়ে ভালো দল। আমরা জানি, আমরা এর চেয়ে ভালো খেলতে পারি। এভাবেই ভাবার চেষ্টা করছি আমরা।’’
বাংলাদেশে আসার আগে ভারতে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগে শারজাহতে নেপালের কাছে হেরেছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। খারাপ সময় তারাও কাটাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মাটি থেকে সিরিজ নিশ্চিত করতে চান ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ড্যারেন স্যামি।
বাংলাদেশে আসার কাছে চেন্নাইয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের ক্রিকেটাররা অনুশীলন করেছেন। নিজেদের খরচে সেই ক্যাম্প আয়োজন করে প্রস্তুতি সেরেছে ক্যারিবীয়ানরা। সেই প্রস্তুতি বাংলাদেশে বেশ কাজে আসবে বলেই বিশ্বাস করেন স্যামি, ‘‘রাদারফোর্ড, শেফার্ড এবং শামার ছাড়া বাকিরা চেন্নাইয়ের একাডেমিতে ছিল। বাংলাদেশ সিরিজের জন্য ক্রিকেটারদের প্রস্তুত করতে বোর্ড যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেজন্য তাদের প্রশংসা করতেই হয়। কেসি কার্টি, আকিম, ও’গিস, গুড়াকেশ মোতি, ইয়ানিক কারিয়াহ, আমির জাঙ্গু যারা টেস্টে ছিল তারা সবাই চেন্নাইয়ের একাডেমিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’’
‘‘ছেলেদের প্রস্তুতির জন্য এমন ব্যবস্থা করতে পারায় আমি খুশি। আবারও বলছি, আমি বিশ্বাস করি আপনি ভালো প্রস্তুতি নিলে আপনার ভালো পারফর্ম করার সুযোগ থাকে। অধিনায়ক যেমনটা বলেছে দিনশেষে আপনি কীভাবে খেললেন এবং সফল হওয়ার জন্য আপনার স্কিল কীভাবে ব্যবহার করলেন সেটাই মূখ্য। আমাদের স্কিলকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে।’’ - যোগ করেন তিনি।
সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে হলে দুই দলের জন্যই সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ। স্যামি সেই কথাই বললেন আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করে নেওয়ার অভিযানে আছি আমরা এবং দলের মনোযোগ এখন সেদিকেই। সরাসরি খেলার জন্য এই পয়েন্টগুলো পেতে চাই আমরা।”
ওয়ানডেতে নিজেদের সুসময় ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে থাকা বাংলাদেশ ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা দেখার। কাজটা নিশ্চিতভাবেই কঠিন হবে। কেননা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড় দেবে না। নিজেদের ডেরায় তারা এখন কেমন করে সেটাই দেখার।