জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়েদ হোসেন হত্যার বিচার দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জুবায়েদ জবির পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সংসদের সভাপতি।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পৃথকভাবে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) জবিতে নিহত জুবায়েদের জানাজা শেষে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি বিজ্ঞান অনুষদের মাঠ থেকে শুরু হয়ে ভাষা শহীদ রফিক ভবন, প্রধান ফটক, শাঁখারি বাজার মোড় ও রায়সাহেব বাজার মোড় প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।
মিছিল চলাকালে শিক্ষার্থী ও নেতাকর্মীরা ‘প্রশাসনের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আমার ভাই মৃত কেনো, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘জাস্টিস, জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “আমার ভাইকে খুন করার পর ২২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। প্রশাসনের এমন উদাসীনতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দ্রুত জুবায়েদের খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনি প্রক্রিয়ায় ফাঁসি দিতে হবে।”
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, “আমরা জনগণের ভোগান্তি এড়াতে অবরোধে যেতে চাই না, কিন্তু জুবায়েদ হত্যার বিচার আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি। বাবা–মায়েরা তাদের সন্তানদের আমাদের হাতে পড়াশোনার জন্য পাঠান, কিন্তু তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না—এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা দ্রুত এই হত্যার বিচার চাই।”
এদিকে, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১০টার মধ্যে জুবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়ায় দ্রুত অগ্রগতি না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২০ অক্টোবর) ভাষা শহিদ রফিক ভবনের নিচে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আল্টিমেটাম দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন।
এ সময় উপস্থিত লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি বলেন, “ইনসাফের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আপনাদের চোখে অনেকেই অপরাধী, কিন্তু আমাদের কাজ হলো প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা। আমরা ইতোমধ্যে মূল ঘটনা উদঘাটন করেছি। বিশ্বাস রাখুন, আগামীকাল সকাল ১০টার আগেই আমরা সুসংবাদ দিতে পারব।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) জুবায়েদ হোসাইন হত্যার প্রতিবাদে এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাবি শাখা ছাত্রদল। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে মুরাদ চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে ‘আমার ভাই মরলো কেন? ইন্টেরিম জবাব চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় জুবায়েদ হত্যার প্রতিবাদে সোমবার (২০অক্টোবর) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ের চির উন্নত মম শির থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, “আমরা পাঁচ আগস্ট পরবর্তী একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা দেখছি একের পর এক ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। জুবায়েদ শুধু ছাত্রদল নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন প্রাণবন্ত ও মেধাবী ছাত্র। আমরা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে জুবায়েদের খুনিদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে।”
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইন হত্যার প্রতিবাদে বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে বেরোবি শাখা ছাত্রদল। মিছিল নিয়ে শহীদ আবু সাঈদ চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় প্রধান ফটকের সামনে এসে সমাবেশ করে তারা।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আল আমিন ইসলাম বলেন, “খুনি হাসিনা ও স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা ছিল, তা না নেওয়ায় আজ আমাদের ভাই জুবায়েদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো অবস্থান করছে। দ্রুত প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর বংশাল এলাকার নূরবক্স রোডে টিউশনি করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত হন জোবায়েদ হোসেন। তিনি পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় রৌশান ভিলা নামের বাসায় এক ছাত্রীকে পড়াতেন। ওই বাসার সিঁড়িতে পড়েছিল তার নিথর দেহ।