সাতসতেরো

জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীকে কেন ‘কট্টর রক্ষণশীল’ বলা হয়

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান। তবে সম্প্রতি দেশটিতে বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা, অবিরাম মূল্যস্ফীতি আর স্থবির মজুরির সাথে লড়াই করছে অনেক পরিবার। এ ছাড়া জাপানের নিম্ন জন্মহারের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা বেড়েই চলেছে। এই যখন পরিস্থিতি তখন দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন একজন নারী। বলছি জাপানের লৌহ মনাবী হিসেবে পরিচিত ‘সানায়ে তাকাইচি’র কথা। যাকে ‘কট্টর রক্ষণশীল’ বলেও অভিহীত করা হচ্ছে।

সানায়ে তাকাইচি ছিলেন টিভি উপস্থাপিকা। এরপর একটি হেভি মেটাল ব্যান্ডের ড্রামার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। জাপানের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে সানায়ে তাকাইচিকে। 

সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা পান ১৯৮০-এর দশকে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বাণিজ্য সংঘাত চরমে ছিল। জাপান সম্পর্কে আমেরিকান ধারণা বোঝার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে তিনি জাপানের সমালোচনাকারী হিসেবে পরিচিত একজন কংগ্রেসওম্যান ডেমোক্র্যাট প্যাট্রিসিয়া শ্রোডারের অফিসে কাজ করতে শুরু করেন। সানায়ে তাকাইচি ১৯৯২ সালে তার প্রথম সংসদীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং হেরে যান। তবে তিনি লক্ষ্যে অটল থাকেন। এর ঠিক এক বছর পরেই একটি আসন জিতে ১৯৯৬ সালে এলডিপিতে যোগ দেন। তারপর থেকে তিনি ১০ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, মাত্র একবার হেরেছেন এবং দলের সবচেয়ে স্পষ্টবাদী রক্ষণশীল কণ্ঠস্বর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

সানায়ে তাকাইচি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী, বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড-ভাঙা মেয়াদসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ভূমিকা পালন করেছেন।

তাকাইচি ২০২১ সালে প্রথম এলডিপির নেতৃত্বের দৌড়ে প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু ফুমিও কিশিদার কাছে হেরে যান তিনি। তবে ২০২৪ সালে আবারও চেষ্টা করেন, এবার প্রথম রাউন্ডের ভোটে শীর্ষে থাকলেও শেষ পর্যন্ত শিগেরু ইশিবার কাছে হেরে যান। এই বছর, তার তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় তিনি জয়লাভ করেন।

জাপানের এই প্রধানমন্ত্রী উচ্চ ব্যয় এবং সস্তা ঋণ গ্রহণের ‘আবেনোমিক্স’(শিনজো আবের নেওয়া অর্থনৈতিক নীতি) অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পুনরুজ্জীবিত করতে চান।

তাকাইচি একজন কট্টর রক্ষণশীল

জাপানের এই নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে বিবাহিত নারীদের কুমারী নাম রাখার অনুমতি দেওয়ার আইনের বিরোধিতা করে আসছেন। তার মতে, বিবাহীত নারীদের কুমারী নাম থাকলে জাপানের এতিহ্য নষ্ট হয়।

বিতর্কিত ইয়াসুকুনি মন্দিরের নিয়মিত দর্শনার্থী ছিলেন তিনি, যেখানে জাপানের যুদ্ধে নিহতসহ দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদেরও সম্মান জানানো হয়।

তিনি দেশের আত্মরক্ষা বাহিনীর ওপর সাংবিধানিক বিধিনিষেধ শিথিল করারও আহ্বান জানিয়েছেন, যাদের আক্রমণাত্মক ক্ষমতা থাকার ওপর নিষিধাজ্ঞা রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি