অস্বাস্থ্যকর পানি ও খাবারসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অপরাজিতা হল। হলের নিম্নমানের খাবার, দূষিত পানি এবং রুমের সীমিত আসন সংখ্যার কারণে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, হলটির টয়লেটের পরিবেশ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। পানির সঙ্গে ছোট ছোট পোকামাকড় বের হচ্ছে। ক্যান্টিনের খাবারের মানও নিম্নমানের। বেশিরভাগ সময় খাবারগুলো ঢেকে রাখা হয় না। ফলে তাতে মাছি বসার সুযোগ পায়। সবমিলিয়ে হলের ছাত্রীরা চরম স্বাস্থঝুঁকিতে রয়েছেন।
সম্প্রতি হলটির এক ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানিতে পোকা ও ময়লা পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরেই অপরাজিতা হলের শিক্ষার্থীরা এই পানির সমস্যায় ভুগছেন। এমন অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকে এলার্জি ও বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।”
তিনি লেখেন, “ওযু, গোসল বা থালাবাসন ধোয়ার সময় এই পানি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের ইউরিন ইনফেকশনসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।”
২০২২ সালের ১৬ আগস্ট হলের সামনে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা পানির স্থায়ী সমাধান দাবি করেছিলেন। তৎকালিন প্রাধ্যক্ষ কমিটি সাময়িকভাবে ট্যাংক ও পাইপ পরিষ্কার করে সমস্যার আংশিক সমাধান করলেও বর্তমানে আবারে সেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সমস্যার বিষয়ে একাধিকবার জানানো হলেও এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
খাবারের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অপরাজিতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা বলেন, “ক্যান্টিনের খাবারের মান একদমই ভালো নয়। অতিরিক্ত ঝালের কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। আমি নিজেও এই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।”
তিনি বলেন, “প্রায় সময় দেখা যায়, খাবারগুলো ঢাকা থাকে না, ফলে মাছি পড়ে। রান্নার জায়গা ও শাকসবজি ধোয়ার পরিবেশও অত্যন্ত নোংরা। শুধু খাবারের মানই নয়, এখন খাবারের পরিমাণও দিন দিন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
বাংলা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুই পাই সং মারমা বলেন, “পানি পরিষ্কার করার ২-৩ দিন পরই আবার পানি থেকে ছোট ছোট পোকা বের হতে থাকে, যা এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারি। তাই আমরা দ্রুত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. কানিজ ফাতেমা বলেন, “অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহারে পানিবাহিত রোগ, ত্বকের সমস্যা, স্ক্যাবিস ও নানা ধরনের অ্যালার্জিজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন এমন ময়লা ও পোকামাকড়যুক্ত পানি ব্যবহার করলে এসব রোগের আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে।”
এ বিষয়ে হলটির প্রাধ্যক্ষ আরিফা শারমিন বলেন, “হলটি পুরনো, তাই ট্যাংক ও পাইপ নষ্ট। নিয়মিত পরিষ্কার করলেও কিছুদিন পর আবার সমস্যা হয়। উপাচার্য স্যার পাইপ পরিবর্তনের বাজেটের আশ্বাস দিয়েছেন। আপাতত ছাঁকনি ব্যবহারের পরামর্শ ও সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা আছে।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা রান্না করায় ময়লা বেশি হয়। সকালে ক্লিনাররা সরালেও দুপুর-রাতের আবর্জনা জমে থাকে।”
টয়লেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতিদিন দুইবার পরিষ্কার করা হয়। তবে নিচতলা মোজাইক হওয়ায় স্যাঁতসেঁতে লাগে।”
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. খসরুল আলম বলেন, “নতুন করে পাইপ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তাতে হয়তো দুই তিন মাস সময় লাগবে। আর নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে।”