জাতীয়

বৈধ অ্যালকোহল ও নিষিদ্ধ মাদক নিয়ন্ত্রণে দুটি অধ্যাদেশ জারির দাবি ব্যবসায়ীদের

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের স্বার্থে বৈধ অ্যালকোহল ও নিষিদ্ধ বিপজ্জনক মাদকদ্রব্যকে পৃথকভাবে সংজ্ঞায়িত ও নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হোটেল (৩ তারকা ও তদনিম্ন) রেস্টুরেন্ট বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বরাবর এক লিখিত আবেদনে নতুন দুটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সমাধানের দাবি জানায়।

আইন উপদেষ্টাকে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, বর্তমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮–তে নিষিদ্ধ বিপজ্জনক মাদকদ্রব্য এবং মানবভোজ্য বৈধ অ্যালকোহল ও অ্যালকোহলজাত পানীয়কে একই আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য বৈষম্যমূলক এবং অনৈতিক।

আবেদনে সংগঠনটি উল্লেখ করেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ইতিহাস শুরু হয় ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ ভারতের ‘The Opium Act–১৮৭৮’ জারির মাধ্যমে। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে ‘The Dangerous Drugs Act’ প্রবর্তিত হয়, যা সমাজ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে প্রথম আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

পরবর্তীতে জাতিসংঘ পর্যায়ক্রমে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশন গ্রহণ করে—Single Convention on Narcotic Drugs (1961) Convention on Psychotropic Substances (1971) UN Convention Against Illicit Traffic in Narcotic Drugs and Psychotropic Substances (1988) এই কনভেনশনগুলোতে মানবভোজ্য অ্যালকোহলকে বিপজ্জনক মাদকদ্রব্যের (Dangerous Drugs) অন্তর্ভুক্ত না করে পৃথকভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য পদার্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

তাদের দাবি, বাংলাদেশও এসব কনভেনশনের সদস্য রাষ্ট্র হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই পৃথকীকরণ নীতিকে দেশের আইনে প্রতিফলিত করা প্রয়োজন।

তারা বলেছে, হুইস্কি, ভদকা, রাম, জিন, টেকিলা, বিয়ার ও ওয়াইনসহ মানবভোজ্য অ্যালকোহলজাত পানীয়সমূহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নির্ধারিত HS কোড ২২.০১ থেকে ২২.০৮ এর অধীনে বৈধভাবে আমদানি ও বিক্রি হয়।

তারা আরো উল্লেখ করেন, “আমরা সরকারের অনুমোদিত লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী। পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৬৫০% পর্যন্ত কর ও শুল্ক প্রদান করে রাজস্বে অবদান রাখছি। অথচ একই আইনে নিষিদ্ধ মাদকের সঙ্গে আমাদের ব্যবসাকে এক কাতারে ফেলে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এটি সামাজিকভাবে অপমানজনক এবং ব্যবসাবান্ধব নয়।”

আবেদনে বলা হয়েছে, একই আইনে বিপজ্জনক নিষিদ্ধ মাদক ও বৈধ অ্যালকোহল একত্রে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ‘হয়রানির সুযোগ’ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আইনের জটিলতা ও অপব্যবহারের কারণে বৈধ লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেপ্তার হচ্ছেন, যা শুধু ব্যক্তিগত নয়, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তাদের জীবন ধ্বংস করছে।

সংগঠনটির দাবি, এই ধরনের ঘটনা জাতিসংঘের কনভেনশন ও মানবাধিকারের নীতির পরিপন্থি। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং আইনগত বিভ্রান্তি দূর করতে সংগঠনটি সরকারকে দুটি পৃথক আইন বা অধ্যাদেশ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে, বিপজ্জনক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ২০২৫, অ্যালকোহল ও অ্যালকোহলজাত পানীয় নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ২০২৫।

তাদের ভাষায়, এই দুটি পৃথক অধ্যাদেশ জারি হলে বৈধ ব্যবসা ও নিষিদ্ধ মাদক কারবারের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন তৈরি হবে। এতে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে পর্যটন শিল্প হবে আধুনিক, স্বচ্ছ ও টেকসই।

সংগঠনটির মতে, অ্যালকোহল ও পর্যটন শিল্প একে অপরের পরিপূরক। আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তুলতে হলে বৈধ অ্যালকোহল ব্যবসায় সুসংগঠিত নীতি দরকার।

চিঠিতে বলা হয়, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের পর্যটন খাত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চিঠির শেষে বলা হয়, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল একজন মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারনিষ্ঠ ব্যক্তি। তাঁর ইতিবাচক ভূমিকার মাধ্যমে ‘নিষিদ্ধ মাদক’ ও ‘বৈধ অ্যালকোহল’ পৃথক করে আইন সংস্কারের মাধ্যমে তিনি জাতির জন্য স্মরণীয় অবদান রাখবেন।

এর আগে হাইকোর্ট একটি রিট পিটিশনের রায়ে মানবভোজ্য অ্যালকোহলকে মাদকদ্রব্য নয় বরং ‘অ্যালকোহল’ হিসেবে অভিহিত করার নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। এছাড়া সরকার ২০২২ সালে ‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা–২০২২’ প্রণয়ন করে পৃথক নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর স্বীকৃতি দিলেও, বর্তমানে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এখনো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর অধীনেই বহাল আছে।