সারা বাংলা

মসজিদভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের দাবি ইমামদের

খুলনায় ইমাম সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, ‘‘মসজিদভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম এবং সমাজ থেকে সকল জুলুম উৎখাত করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ইমামদের ভূমিকা রাখতে হবে।’’ 

শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে ‘সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ইমামদের ভূমিকা’ শীর্ষক ইমাম সম্মেলনে বক্তারা এ সব কথা বলেন। খুলনা জেলা ইমাম পরিষদ এ সম্মেলনের আয়োজন করে। 

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘‘সমাজ থেকে জুলুম উৎখাত ও ন্যায়বিচার কায়েম করতে হলে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী কাজ করে সমাজে পরিবর্তন আনতে হবে।’’ 

বক্তারা আরো বলেন, ‘‘মসজিদকে কেন্দ্র করে প্রতিটি এলাকা তৈরি করতে পারলে এবং এলাকার সকল মুসলমান নামাজি হলে তারা কুরআন হাদিসের বিধি-বিধান মেনে চলবে। আর এর মধ্য দিয়ে সমাজে ন্যায় বিচার, ইনসাফ ও শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হবে।’’ 

ইমাম সম্মেলনে মুসলমানদের ঈমান আকীদা হেফাযত এবং আমল আখলাক সংশোধন করার লক্ষ্যে ইমামদের তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন, মুসলিম উম্মাহর ক্রান্তিকালে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সঠিক পথের দিশা দেওয়া এবং মুসলিম উম্মাহকে হক্কের পক্ষে ও বাতিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে মসজিদকে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করাসহ ১০ দফা প্রস্তাব ও দাবি পেশ করা হয়। 

সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহিবুল্লাহিল বাকি আন নদভি। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি জসিম উদদীন। সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা মোহাম্মাদ সালেহ।

সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহিবুল্লাহিল বাকী আন নদভি বলেন, ‘‘ভালো কাজ করা কঠিন, আর চুরি-চামারি, সুদ- ঘুষ খাওয়া সহজ। এ সমাজে ইমামদের প্রতিটি পদক্ষেপে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাদের ইমামের দায়িত্ব পালন করতে হয়। যারা ইমামদের বিরোধিতা করে তারাও বিপদে পড়লে ইমামদের কাছেই দোয়ার জন্য আসে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্রের কারণে ইমামদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি ইমাম ও আলেম-ওলামাদের একে অপরের বিরুদ্ধে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে এবং চাকরির পরোয়া না করে রিজিকের জন্য আল্লাহর ওপর নির্ভর করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি জসীম উদদীন বলেন, ‘‘পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই যার যার হক আদায় করলে সবকিছুই সঠিকভাবে চলবে এবং সর্বত্র শান্তি বিরাজ করবে।’’ 

ইমামদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘নিজেরা নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলে অন্যরাও সম্মান দিবে।’’ একই সঙ্গে যারা সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে ষড়যন্ত্র করছে, তাদের ব্যাপারে উম্মতকে বোঝানোর আহ্বান জানান তিনি। বিশেষ করে ইসকন ও কাদিয়ানীদের ব্যাপারে ইমামদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি মুসলমানদের সন্তানদের কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত করার মধ্য দিয়ে পরিবার, মহল্লা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামের প্রসার ঘটাতে ইমামদের মনোবল বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

মাওলানা জাফর সাদিকের পরিচালনায় ইমাম সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মসজিদ মিশন খুলনার সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস,  খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সহ-সভাপতি মুফতি মুস্তাক আহমাদ, হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুল আউয়াল, মাওলানা আসাদুল্লাহ, মুফতি জিহাদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুস সউদ প্রমুখ। 

সম্মেলনে ১০ দফা প্রস্তাব ও দাবি উপস্থাপন করেন খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তালিমুল মিল্লাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুস সউদ। 

প্রস্তাব ও দাবিগুলোর অন্যতম হলো, মুসলমানদের ঈমান আকীদা হেফাযত এবং আমল আখলাক সংশোধন করার লক্ষ্যে রসুলুল্লাহ (সা:) এর উত্তরসূরী হিসেবে ইমামদের তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে; মুসলিম উম্মাহর ক্রান্তিকালে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে; মুসলিম উম্মাহকে হক্কের পক্ষে ও বাতিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং মসজিদকে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে হবে; পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মসজিদ পরিচালনা কমিটিকে সংস্কার করে মসজিদে নববীর অনুকরণে মসজিদ কেন্দ্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে ইমামদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ প্রদান করা; মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালার আলোকে খতীব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের ইনসাফ ভিত্তিক সম্মানজনক সম্মানী প্রদানের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি জানানো; বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সকলস্তরে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে; শতকরা ৯২ শতাংশ মুসলিম দেশে সকলে যাতে শুদ্ধভাবে কুরআন শিখতে ও বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারে সেজন্য কুরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

সম্মেলন শেষে দেশ, জাতি তথা মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ এবং ইমাম পরিষদের মৃত সদস্যদের রুহের মাগফেরাত ও অসুস্থদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি জসিম উদদীন।