সাতসতেরো

চীনের ‘বৃদ্ধ শিশু’ লাওৎসি

চীনের ‘বৃদ্ধ শিশু’ হিসেবে পরিচিত প্রকৃতিবাদী দার্শনিক লাওৎসি। যিনি মনে করতেন, মানুষকে একবার ব্যক্তিস্বার্থের উর্দ্ধে উঠে আসতে হবে, তবেই শান্তি আসবে। লাওৎসি বিশ্বাস করতেন, ‘‘এই পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুই ভারসম্যমূলক নিয়মে আবর্তিত হচ্ছে। ’’ এমন ভাবনার জন্য তাকে ‘বৃদ্ধ শিশু’ বলা হয়ে থাকে। 

যদিও চৈনিকরা মনে করে থাকেন লাওৎসি খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকে জন্মে ছিলেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে তিনি আসলে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম-৪র্থ শতকের মানুষ।

লাওৎসি তাওবাদের প্রবক্তা। তিনি ছিলেন চু প্রদেশের রাজকীয় লাইব্রেরির তত্ত্বাবধায়ক এবং প্রকৃতিবাদী দার্শনিক। 

কিন্তু মানুষের কারণেই যখন চীনে দুর্নীতি বাড়ছিলো তিনি তখন দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। নিজ ইচ্ছায় যেতে চান নির্বাসনে।  পথে ঘটেছিলো বিষ্ময়কর এক ঘটনা।

লাওৎসি যখন চীনের পশ্চিম সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলেন সীমান্ত সীমান্তরক্ষীদের প্রধান ইন সি তার পথ আটকে দাঁড়ান। ইন সি লাওজুকে চিনতে পেরেছিলেন। তিনি লাওজুকে বলেন, চিরতরে দেশ ত্যাগ করার আগে কিছু উপদেশ দিয়ে যান। ইন সি তার জীবন সহজ করার উপদেশ চেয়েছিলেন।

অনেক ভেবে রাজি হলেন লাওৎসি। লিখিত আকারে শুরু করলেন জীবন সহজ করার উপায় লেখা। সীমান্তরক্ষীর পাশে একটা পাথরের ওপর বসলেন তিনি। লিখে ফেললেন তাওবাদের মহাগ্রন্থ তাও তে চিং।  লেখা শেষ করে ইন সির হাতে তুলে দেন গ্রন্থটি। তারপর পশ্চিমের কুয়াশায় চিরতরে হারিয়ে গেলেন লাওৎসি। ইন সিই পরে তা অনুলিপি তৈরি করেন ও প্রচারে ভূমিকা রাখে।

তাওবাদ অনুসারে, মানুষ প্রকৃতপক্ষেই ভেতর থেকে ভালো। শুধু সেই ভালোত্বকে জাগিয়ে তুলতে হয় মন্দত্বকে ছাপিয়ে।

তাও তে চিং তাওবাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত। এটি ধর্মগ্রন্থ নয়। এতে স্থান পেয়েছে দার্শনিক কবিতার মাধ্যমে জীবন যাপনের নির্দেশিকা। বইটির শুরুর দুই লাইন অনেক জনপ্রিয়। ‘‘তাও ক তাও ফেই ছাং তাও, মিং ক মিং ফেই ছাং মিং”। যার বাংলা অর্থ ‘‘যে তাওকে মুখে প্রকাশ করা যায়; তা চিরন্তন তাও না। আর যে নামকে নামে আবদ্ধ করা যায়; তা চিরন্তন নাম না।’’

তাওবাদ-এ স্বীকার করা হয়েছে,‘‘ মানুষ প্রকৃতপক্ষে ভেতর থেকে ভালো। শুধু সেই ভালোত্বকে জাগিয়ে তুলতে হয় মন্দত্বকে ছাপিয়ে। সঠিক নির্দেশনা এবং শিক্ষা প্রদান করা হলে যে কাউকে মহৎ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।’’