ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যার ১০০ দিন পেরোলেও জড়িতদের এখনো গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। দ্রুত হত্যার বিচার দাবিতে কফিন মিছিল করেছেন ইবি শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার ১ মাস ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তের অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) পৌনে তিনটায় বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রক্টর অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী ও অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম, সিআইডি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার আবু তারেক ও তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
এ সময় শাখা ছাত্রদল, শাখা ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া ইবি শাখার নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৈঠকে জানা যায়, সাজিদের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। নিয়মিত তথ্য সংগ্রহে ক্যাম্পাসে আসছেন তারা। এখন পর্যন্ত ৩৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
আলোচনায় তদন্তের স্বার্থে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি সাজিদের হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, তার একটাই পরিচয়- সে অধরাধী।
তদন্তের প্রয়োজনে যে কাউকে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করার এখতিয়ার আছে। তবে নিরপরাধ কাউকে যেন কোনো প্রকার হেনস্তা করা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখার দাবি জানান তারা।
তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই কোনো ঘটনায় সন্দেহজনক হিসেবে তদন্ত সংস্থা কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনায় একইভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া একটু কঠিন। কেননা কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেলে অনেক সময় তাকে অপরাধী হিসেবে মনে করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমরা তদন্তের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা বা অন্য যেকোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবো মর্মে প্রশাসনের কাছে প্রজ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
অপরাধীদের দ্রুত শনাক্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর নির্দেশে বৈঠকে দুইটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো- প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তদন্ত কাজের পর্যালোচনা বৈঠক করবে সিআইডি; তদন্তের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা বা অন্য যেকোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর পাড় থেকে সাজিদের হত্যার বিচার দাবিতে কফিন মিছিল শুরু হয়। পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসন ভবন চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফত ছাত্রমজলিস, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়াসহ ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন অংশ নেয়। এ সময় আগামী সাতদিনের মধ্যে সাজিদ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীরা জড়িতদের বিচার দাবিতে আন্দোলন করে। হত্যার ঘটনায় প্রায় ২ মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের দায়িত্ব পায় ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।
এ হত্যার ১০০ দিন পেরোলেও জড়িতদের এখনো গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এছাড়া দায়িত্বের ১ মাস ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।