শিশু আব্দুল্লাহ আর পারিসার নিষ্পাপ দুই জোড়া চোখ শত মানুষের ভিড়ে খুঁজে ফিরছে তাদের বাবা আবুল কালাম আজাদকে। তারা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি যে, প্রিয়তম বাবা আর পৃথিবীতে নেই, কোলে নিয়ে করবে না আদর।
অন্যদিকে, হঠাৎ করে স্বামীকে হারিয়ে অথৈ সাগরে পড়ে গেছেন প্রিয়া। অবুঝ দুটি শিশুকে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের ভুলের মাশুল গুনছে পুরো পরিবার।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠী এলাকার মৃত আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে আবুল কালাম আজাদ স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলি এলাকায় বাস করতেন। তিনি রাজধানীতে একটি বেসরকারি এজেন্সিতে চাকরি করতেন। আয়ের একটি অংশ গ্রামের বাড়িতে পাঠাতেন। গতকাল রবিবার বেলা ১২টার দিকে ব্যক্তিগত কাজে রাজধানী ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় যাওয়ার সময় মেট্রোরেলের বেয়ারিং প্যাড খুলে তার ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আবুল কালাম আজাদ।
আবুল কালাম আজাদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেওয়া হলেও তা যৎসামান্য ও অপ্রতুল। সন্তানদের নিয়ে কীভাবে সামনের দিনগুলো পার করবেন, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না প্রিয়া।
তিনি বলেছেন, “আমাদের সংসার এখন কীভাবে চলবে? ছোট ছোট বাচ্চাগুলো নিয়ে সামনে কীভাবে চলব, বুঝতে পারছি না। আমার স্বামীর মতো যাতে আর কারো মৃত্যু না হয়।”
শুধু ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন আবুল কালাম আজাদের স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহতের চাচাত ভাই আব্দুল গণি বলেছেন, সরকারিভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কেউ আমাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। আবুল কালাম আজাদের আয়ের ওপর পুরো পরিবার নির্ভরশীল ছিল। আমরা দাবি জানাই, তার পরিবারের কথা ভেবে সরকার অন্তত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিক, যাতে তার সন্তানদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ হয়।
নিহতের নিকটাত্মীয় কাওসার আহম্মেদ বলেন, আমরা মনে কবি, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এভাবে একটি তাজা প্রাণ চলে যাবে, তা আমরা কল্পনা করিনি। আমরা চাই, এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পরিবারটির পাশে দাঁড়াক সরকার।
নড়িয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেছেন, আমরা ক্ষতিপূরণের বিষয়টি গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। তবে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।