সারা বাংলা

খতিব মোহেববুল্লাহ নিজের অপহরণের নাটক সাজান: পুলিশ

গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী (৬০) নিজে অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পঞ্চগড়ে তিনি নিজেই নিজের পায়ে শিকল লাগিয়ে শুয়ে ছিলেন। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় গাজীপুর শহরের নলজানি এলাকার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপপুলিশ কমিশনার মো. জাহিদ হোসন ভূঁইয়া, মো. মহিউদ্দিন আহমেদ ও এস এম শফিকুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মরকুন টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী অপহৃত হয়েছেন সংক্রান্তে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা করা হয়। 

মামলার এজাহারের মোহেববুল্লাহ মিয়াজী উল্লেখ করেন, গত ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজি (৬০) মর্নিং ওয়াকে বের হন। টঙ্গী শিলমুন এক্সোস লিংক সিএনজি ফিলিং এন্ড কনভারশন সেন্টারের সামনে টঙ্গী-কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক সড়কের উপর একটি অ্যাম্বুলেন্স তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। এ সময়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জন জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠায়। পরে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে নির্যাতন করতে থাকে এবং গাড়ি বিরতিহীনভাবে চলতে থাকে। এভাবে থেমে থেমে তারা তাকে শারীরিক নির্যাতন করে।  পঞ্চগড়ের স্থানীয় জনতা জাতীয় জরুরী সেবা ‘৯৯৯’ এ ফোন করলে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের সহায়তায় তিনি পঞ্চগড় থেকে নিজ বাসায় ফিরে আসেন। 

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান বলেন, ‘‘মামলার তদন্ত টিম টিএন্ডটি কলোনীস্থ বাদীর নিজ বাসা থেকে ঘটনাস্থল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেন। তদন্তকালে দেখা যায়, মোহেববুল্লাহ মিয়াজী তার বাসা হতে বের হয়ে একাকী হেঁটে নিমতলী সিএনজি পাম্প পার হয়ে পূবাইল থানাধীন মাজুখান ১৪তলা পার হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বাদী তার এজাহারে ৪-৫ জন কর্তৃক তাকে অ্যাম্বুলেন্স তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও ওই সময়ের ৩ ঘণ্টার মধ্যে কোনো ধরনের অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়নি। ২২ অক্টোবর শ্যামলী বাস কাউন্টার, বগুড়ার হোটেল যাত্রাবিরতি, সিসিটিভি ফুটেজ, বাস চালক ও সহকারীদের সাক্ষ্য, পঞ্চগড়ের গতিবিধি যাচাই বাছাই করা হয়।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘যাচাই করে জানা গেছে, রাত অনুমান সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে পঞ্চগড়ের সর্বশেষ বাস স্টেশনে নেমে মোহেববুল্লাহ মিয়াজী সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন। ওই সময় তার সামনে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ লাইন্স দৃশ্যমান হয়। তার প্রস্রাবের বেগ হলে তিনি আরো কিছু দূর এগিয়ে অন্ধকার জায়গায় রাস্তার পাশে প্রস্রাব করতে গেলে প্রস্টেট গ্রন্থির রোগের কারণে তার পায়জামা ও পাঞ্জাবি ভিজে যায়। তিনি তার নিজ হাতে পায়জামা ও পাঞ্জাবি খুলে ফেলেন। কিছুটা ঠান্ডা অনুভব করায় এবং শরীর ক্লান্ত থাকায় অবচেতন মনের কারণে তার পক্ষে পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরিধান করা সম্ভব হয়নি। এ সময় রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া সোনালী রংয়ের ছোট তালা সংযুক্ত শিকল তিনি পায়ে জড়িয়ে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে জেগে তিনি দেখতে পান পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে আছেন। আশপাশের উলামায়ে কেরামগণ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার অবচেতন মনে তিনি বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেন।’’

মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী এক ভিডিও বার্তায় তিনি নিজেও ঘটনার বর্ণনা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় আমার মাথায় এমন সমস্যা দেখা দেয়। এর আগেও এমনটা হয়েছিল।’’

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান বলেন, ‘‘বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। ওই ব্যক্তির বক্তব্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত রয়েছে কি-না বা কী উদ্দেশ্যে কারো প্ররোচনায় এ কাজ করেছেন কি-না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।’’ 

অধিক তদন্তের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এ পুলিশ কর্মকর্তা।