সারা বাংলা

ড্যাফোডিল-সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘর্ষ: শিক্ষার্থীদের আসামি করে পাল্টাপাল্টি মামলা

সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও শিক্ষার্থী জিম্মি করে রাখার ঘটনায় একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে ড্যাফোডিল এবং সিটি ইউনিভার্সিটি। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) মধ্যরাতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক লিখিত এজাহার দায়েরের পর সাভার মডেল থানা পুলিশ মামলা দুইটি রেকর্ড করে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সংঘাতের ঘটনা তদন্তে ও ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দেখতে সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত দল।

ইউজিসির করা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, এটা কেন ঘটলো তদন্ত করতে হবে। ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, এই বিষয়ে আমরা সীমাবদ্ধ থাকব। আইনগত বিষয় রাষ্ট্রের আইনে পরিচালিত হবে।” 

সিটি ইউনিভার্সিটির পক্ষে মামলা (নম্বর- ১৬/২৯-১০-২৫) করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মীর আকতার হোসেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে মামলা (নম্বর- ১০৭/২৯-১০-২০২৫) করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ খান।

বিশ্ববিদ্যালয় দুটির পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা দুটির কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

বুধবার সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করে ইউজিসির তদন্ত কমিটি

সিটি ইউনিভার্সিটির করা মামলায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির এক হাজার শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা ও প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ বেআইনীভাবে সমবেত হয়ে সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশ করে যানবাহন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ পেট্রোল বোমা ও হাত বোমার ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার অফিসকক্ষে ভাঙচুর, দামি জিনিসপত্র লুট এবং ১৫ লাখ টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২০ কোটি টাকা বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির করা মামলায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ব্যাচেলর প্যারাডাইসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীকে আহত করাসহ হামলার পর ১১ জন শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে সারারাত আটকে রেখে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায়, অমানবিক নির্যাতন, মারধর এবং মনস্তাত্ত্বিক ভয় দেখিয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিতে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া জানান, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “দুইটি মামলা হয়েছে। সিটি ইউনিভার্সিটির মামলার বাদী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। এজাহারনামীয় একজনসহ অজ্ঞাত এক হাজারের বেশি ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে। আর ড্যাফোডিলের মামলায় এজাহারনামীয় অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদি হয়েছেন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা।”

তিনি বলেন, “এখন আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ইউজিসির করা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বলেন, “গতকাল ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে, আজকে আমরা প্রথম পরিদর্শন করছি। এখানে কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি পরিদর্শন করে গেলাম। আমরা উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য চাইব।” 

তিনি বলেন, “তাদের বক্তব্য পাওয়া সাপেক্ষে এবং আশপাশের যে সিসিটিভি আছে, সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন  বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কাছে আমরা পেশ করব। দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হবে সেটি। দ্রুত ক্যাম্পাসের কার্যক্রম চালু হয়, সেটিও আমরা দেখব।”

সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান বলেন, “কী ধরনের এবং কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তারা (তদন্ত কমিটি) সেটি পরিদর্শন করছেন। লুটপাটের দৃশ্য এখনো দৃশ্যমান। ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা দৃশ্যমান। ইউজিসির তদন্ত চলছে, তারা যে ব্যবস্থা নেবেন, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”

গত রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে থুতু ফেলাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংঘাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সাভারের খাগান এলাকা। ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে রাতভর। আহত হন উভয় পক্ষের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয় সিটি ইউনিভার্সিটির ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও পরিবহন।