সারা বাংলা

‘ধান আবাদ করেও ভাত খাইতে পারি না’

“একর প্রতি এখন এমনিতেই ৭০ হাজার টাকা খরচ আছে। সার, বীজসহ অন্য সব খরচই বেশি। বাজারে চালের দামও অনেক চড়া। ধানের দাম নেই। ধান বেচে লাভ হচ্ছে না। আমরা ধান আবাদ করেও ভাত খাইতে পারি না।” এভাবেই নিজের আক্ষেপের কথা বলছিলেন ঠাকুরগাঁও সদরের গড়েয়া এলাকার আমন চাষি ইব্রাহীম। 

গড়েয়া এলাকার মতো জেলার সর্বত্রই মাঠে এখন সোনালি ধান বাতাসে দুলছে, কিন্তু সেই বাতাসে ভেসে বেড়ায় কৃষকের দীর্ঘশ্বাস। যে মানুষ নিজের ঘাম দিয়ে দেশের খাদ্য যোগায়—সেই কৃষক আজও বেঁচে থাকার সংগ্রামে পরাজিত, কারণ ঘামের ন্যায্য মূল্য এখনো অনিশ্চিত।

কৃষি অধিদপ্তর তথ্য মতে, এবার জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন চাল। ইতোমধ্যে ৬ থেকে ৭ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। অনেক জমিতে এখন চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। 

একই জমিতে রবি শস্য চাষের জন্যে আগাম আমন আবাদ করে থাকেন চাষিরা। ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় এবার আগাম আমন ধান চাষে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। প্রকৃতি ছিল অনুকূলে, বৃষ্টি ও রোদ পেয়েছে ঠিকমতো। ফলে অনেক কৃষকই এখন ধান ঘরে তোলার ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে, তাদের মাঝে নেই নতুন ফসল ঘরে তোলার উচ্ছ্বাস, নেই হাসি মাখা মুখের আনন্দ। তাদের একটাই কথা— ফলন ভালো, কিন্তু দাম নেই।

কৃষকরা বলছেন, ৫০ শতক বা এক বিঘা জমিতে সার, বীজ, শ্রম ও জমি লিজের মূল্যসহ—সব কিছু মিলে উৎপাদন খরচ হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। বিঘায় এবার ধানের ফলন হয়েছে প্রায় ৩০ মণ করে। বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা বস্তা। কৃষকদের লাভ বলতে তেমন কিছুই থাকে না। যদি ৩ হাজার টাকা বস্তা দাম পেতেন তাহলে হয়তো তাদের কিছুটা লাভ হতো। তাই তারা সরকারকে ধানের সঠিক দাম নির্ধারণের আহ্বান জানান।

আমন চাষি শুভ বলেন, “এখন জমির লিজ মূল্য অনেক বেশি। অন্য সব খরচও খুব বেড়েছে। বাজারে ধান বেচে খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে আমরা দিন পার করব কীভাবে?” 

আকচা এলাকার আমন চাষি সোহেল রানা বলেন, “ধানের দাম নেই। ধান বেচে হাতে কিছুই থাকছে না। সেই তুলনায় চালের দাম বেশি। আমরা ধানের আবাদ করি, কিন্তু বাজারে চালের দাম শুনলে অবাক হতে হয়। যথেষ্ট টাকাও নেই যে, কিছু ধান রেখে খাবার চিন্তা করব।” 

ভেলাজান এলার তানভীর হাসান বলেন, “চাষাবাদ করে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে গেছে। পরিবারের শখ পূরণের কথা চিন্তাও করতে পারি না। আমাদের এই কষ্ট কি আর শেষ হবে না?” 

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাজেদুল ইসলাম বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এখনো সরকারি দাম নির্ধারিত হয়নি। তাই হয়তো ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। আশা করি, সরকারি দাম নির্ধারিত হলে ধানের দাম কিছুটা বাড়বে।”