সপ্তদশ শতাব্দীতে ইতালির একজন পেশাদার বিষ বিক্রেতা ছিলেন যার নাম গিউলিয়া তোফানা। সিসিলির পালেরমোতে তার জন্ম হয়েছিল। গিউলিয়া তোফানা নিজ হাতে বিষ তৈরি করতেন। ওই বিষের নাম ‘অ্যাকোয়া তোফানা’। গিউলিয়া তোফানা এই বিষ মূলত এমন নারীদের কাছে এই বিষ বিক্রি করতেন, যারা তাদের অত্যাচারী স্বামীদের হত্যা করে মুক্তি পেতে চাইতেন।
‘অ্যাকোয়া তোফানা’ নামের ওই বিষ ছিল স্বাদহীন, গন্ধহীন এবং বর্ণহীন। এর প্রধান উপাদানগুলো ছিল আর্সেনিক, সীসা এবং বেলাডোনা। এটিকে প্রসাধনী বা নিরাময়কারী তেলের ছদ্মবেশে ছোট ছোট শিশিতে বিক্রি করা হতো। যাতে প্রশাসন সন্দেহ না করে।
গিউলিয়া তোফানা গোপনে তার মেয়ে এবং কয়েকজন বিশ্বস্ত সহযোগীর মাধ্যমে বিষের ব্যবসা চালাতেন। এই সহযোগীরা ছদ্মবেশে ওষুধ বা প্রসাধনী বিক্রি করত। এই বিষ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে এটি ধীরে ধীরে কাজ করত। অল্প পরিমাণে বিষ কয়েকদিন ধরে প্রয়োগ করলে মৃত্যুটি সাধারণ অসুস্থতার মতো মনে হতো এবং কারো মনে সন্দেহ জাগত না।
সপ্তদশ শতাব্দীর ইতালির সমাজে বিবাহবিচ্ছেদের কোনো সুযোগ ছিল না। যার ফলে অনেক নারী তাদের নিষ্ঠুর স্বামীর হাত থেকে বাঁচতে গিউলিয়ার বিষকে একমাত্র উপায় হিসেবে দেখতেন। একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে তিনি শহরের পানি বিষাক্ত করেছেন। এর ফলে কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভয়াবহ নির্যাতনের পর তিনি ১৬৩৩ থেকে ১৬৫১ সালের মধ্যে রোমে ৬০০ জনেরও বেশি পুরুষকে বিষ দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
১৬৫৯ সালে তাকে এবং তার মেয়েকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তার গল্প ইতালীয় লোককথার একটি অংশ হয়ে আছে এবং এটি তৎকালীন সমাজে নারীর অসহায়ত্বের একটি করুণ তুলে ধরে।