বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, “জুলাই সনদ আমাদের সবারই প্রত্যাশা ছিল। অনেকগুলো মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে এটি তৈরি হয়েছে। যদিও এখানে কিছু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি হিসাব-নিকাশ আছে। কিন্তু এরপরেও আলহামদুলিল্লাহ, যতটুকু হয়েছে, এটা বাংলাদেশের জন্য নতুন ইতিহাস, নতুন মাইলফলক। তো এই সনদ স্বাক্ষর হয়েছে। এটাকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য অবশ্যই গণভোট আয়োজন করা দরকার।”
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) শাখা ছাত্রশিবিরের আয়োজিত ২০২৪-২৫ বর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “যদিও আইনি ভিত্তি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে করা হয়, কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো একটি অর্ডিন্যান্স অন্য একটি দল এসে বিভিন্ন সময়ে সেটা আবার পরিবর্তন করে ফেলে। এজন্য গণভোট হলে এটা দিয়ে আইনি ভিত্তি পাবে বা সবার একটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, সেটা অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে অতটা পাবে না। এজন্য আমরা গণভোটের পক্ষে। আর এটি অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের আগেই হওয়া যুক্তিযুক্ত, যা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করছে।”
ছাত্র সংসদ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব রাখার বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রথমত, আমরা ছাত্র অঙ্গনে কাজ করি। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, ছাত্র রাজনীতি জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে। পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ি বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যতগুলো ইভেন্ট হয়েছে, বড় বড় ঘটনা ঘটেছে, সবগুলোতে ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের একটা ভূমিকা ছিল।”
তিনি বলেন, “সে জায়গা থেকে আমাদের কাছে একটা চিত্র স্পষ্ট, তা হলো মানুষের চিন্তার একটা পরিবর্তন হয়েছে। জুলাই এবং আগস্ট শুধু নিছক একটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বা আন্দোলন ছিল না। এটা টোটাল জেনারেশনের চিন্তার একটি জাগরণ হয়েছে এবং এই জাগরণটা হচ্ছে, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলের যে ফ্যাসিবাদী আচরণ, এটা মানুষ এখন আর দেখতে চায় না।”
তিনি আরো বলেন, “এখন মানুষ গঠনমূলক কাজ চায়। আগের মতো কাঁদা ছোড়াছুড়ি, নোংরামি অথবা রাজনৈতিক কালচারের মধ্যে যে নেগেটিভিটিগুলো রয়েছে, এগুলো শিক্ষার্থীরা এখন আর দেখতে চায় না। আমি মনে করি, ঠিক একই বিষয় জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেও ঘটছে। সাধারণ মানুষ আর আগের কালচারের রাজনীতিকে পছন্দ করছে না। যারা রাজনীতির নয়া স্বরূপ অথবা সত্যিকারের অর্থে মানুষের কল্যাণের জন্য গঠনমূলক এজেন্ডা নিয়ে হাজির হবে, তারাই জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব পাবে।”
এর আগে সকাল সাড়ে ৯ টায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২৪-২৫ বর্ষের দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয় শাখা ছাত্রশিবির। এ সময় নবীনদের ফুল, আল-কুরআন এবং ছেলেদের টি-শার্ট ও মেয়েদের হিজাবসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দিয়ে বরণ করে নেয় তারা।
ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, আইআইইআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অ্যধ্যাপক ড. আব্দুল করিম, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী, কেন্দ্রীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সম্পাদক সম্পাদক এইচএম আবু মুসা, ব্যবসায়িক শিক্ষা সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
নবীন বরণ অনুষ্ঠানে ইসলাম নিয়ে ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ইসলামোফোবিয়ার মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীতে ইসলামকে একটা ভয়ংকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা এককভাবে কেউ করেনি, বরং এটি পশ্চিমারা করেছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে যারা আধিপত্যবাদ কায়েম করতে চায়, যারা হিন্দুত্ববাদ কায়েম করতে চায়, তারা করেছে। পাশাপাশি আমাদের দেশের কিছু দালাল শ্রেণী রয়েছে, তারা সবাই মিলে ইসলামকে ফোবিয়ারূপে উপস্থাপন করছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা শুধু দুনিয়ার সফলতা চাই না উভয় জগতের সফলতা চাই। রাসুল (সা:) বিদায় হজ্জের সময় আমাদেরকে কুরআন এবং সুন্নাহ আকড়ে ধরতে বলেছিলেন। আমরা রাজনৈতিক জীবন, সামাজিক জীবন, সাংস্কৃতিক জীবন সর্বত্র জায়গায় কুরআন আর সুন্নাহ আকড়ে ধরলেই সফলতা আসবে। আমরা কোরআনের প্রত্যকটা লাইন নিয়ে যতো বেশি চিন্তা করব ততো বেশি সমৃদ্ধ হবো। ইসলামকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে আবার একটি পুনর্জাগরণ ঘটবে ও একটি ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।”
ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ছাত্র রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চাই। আগে চলেছে শুধু গুম খুন রাহাজানি হত্যার রাজনীতি। এগুলো আর আমরা চাই না। আগে ধর্ষণে সেঞ্চুরি করে তা আবার প্রচার করে বেড়ানো হত। এটা হলো জাহেলিয়াতের রাজনীতি, এটা আর আমরা চাই না। কোনো গোলামীতন্ত্র আমরা চাই না। ইসলাম আমাদের এটা শেখায় না। যে রাজনীতি দিয়ে রাষ্ট্রের কল্যাণ করবে, শিক্ষার্থীদের কল্যাণ করবে, ক্যাম্পাসের সমস্যা আইডেন্টিফাই করে সমাধান বের করতে পারবে, সেই রাজনীতি আমরা চাই।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা শুধু নিজের স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। মা-বাবাদের স্বপ্ন রয়েছে, শিক্ষকদের স্বপ্ন রয়েছে। এগুলোকে আপনাদের ধারণ করতে হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আপন করে নিজের মত করে গড়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে হবে। জ্ঞান মানে হলো আলো। এই আলোর মানে লাইট নয়। বরং মানুষের মধ্যে যে পশুত্ব রয়েছে, তা দূর করে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা। আপনাদের সকল জ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য হতে হবে মানুষর জন্য এবং কল্যানের জন্য।”