একটা সময় ছিল, তার নাম উচ্চারিত হওয়া মানেই বিদ্যুতের মতো কাঁপন ছড়িয়ে যেত ফুটবলবিশ্বে। পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হত স্টেডিয়ামভরা মানুষ। আলোচনায় থাকত কেবল একটিই নাম- নেইমার দ্য সিলভা সান্তোস জুনিয়র।
কিন্তু এখন? সেই আলো যেন ফিকে। তবু নিভে যায়নি একেবারে। আর ঠিক এই জায়গাটাতেই তৈরি হয়েছে রহস্য। তিনি কি আবার ফিরবেন ইউরোপে, নাকি নিজভূমেই শেষ হবে তার সেই রূপকথা?
কয়েক মাস ধরেই ভেসে আসছিল গুঞ্জন, ২০২৬ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে হয়তো ইউরোপের কোনো ক্লাবে ফিরবেন নেইমার। হয়তো আবার দেখা যাবে তাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের আলোয়, পুরনো মঞ্চে। কিন্তু সময়ের সাথে সেই সম্ভাবনা যেন ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে কুয়াশার মতো।
স্প্যানিশ দৈনিক ‘এএস’ জানিয়েছে, সব হিসাব-নিকাশ শেষে নেইমারের মন এখন বোধহয় স্থির হয়েছে এক জায়গায়। আর সেটা নিজের শৈশবের ক্লাব সান্তোসে। যেখান থেকে একসময় শুরু হয়েছিল তার স্বপ্নের উড়ান, সেখানেই যেন আবার ফিরে এসেছে তার গল্প।
গত শীতে আল-হিলালের সংক্ষিপ্ত অধ্যায় শেষ করে ব্রাজিলে ফেরেন তিনি। কিন্তু ‘চোট’ নামক শব্দটি যেন বারবার এসে বাধা দেয় তার ক্যারিয়ারের গল্পে। তাকে থামিয়ে দেয় মাঝপথে। মাঠে ফিরেছেন, কিন্তু এখনও যেন নেই সেই পুরনো ছন্দ, নেই আগের সেই দীপ্তি খুঁজে ফিরছেন। সান্তোস দলটিও লড়ছে লিগে টিকে থাকার সংগ্রামে, ঠিক যেমন নেইমার লড়ছেন নিজের পুরনো সত্তাকে ফিরে পাওয়ার যুদ্ধে।
তবুও ক্লাবের বিশ্বাসে কোনো ফাটল ধরেনি। ৩৩ বছর বয়সী এই তারকার সঙ্গে নতুন চুক্তির পরিকল্পনা করছে সান্তোস। তারা যেন এখনো বিশ্বাস করে, নেইমারের ভেতরের জাদুকর একদিন আবার ফিরে আসবে।
অন্যদিকে, ইউরোপের ক্লাবগুলো এখনো নীরব নেইমারের প্রশ্নে। কোনো আলোচনার ফিসফাস নেই, নেই কোনো আনুষ্ঠানিক আগ্রহের বার্তা। হয়তো এ নীরবতাই উত্তর দিচ্ছে সেই প্রশ্নের- নেইমারের পরবর্তী অধ্যায়ের সূচনা ইউরোপে নয়, বরং নিজের জন্মভূমির মাটিতেই।
নেইমার ইতিমধ্যেই খেলেছেন তিনটি বিশ্বকাপে। সর্বশেষটি ২০২২ সালে। তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচও এখন দুই বছরের পুরোনো, ২০২৩ সালের অক্টোবরে। সময়ের স্রোতে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা এখনো রয়ে গেছে- এটাই কি তবে নেইমারের শেষ অধ্যায়? নাকি সান্তোসের মাটিতে আবার জ্বলে উঠবে সেই পুরনো জাদু?
উত্তরটা হয়তো সময়ের বুকেই লুকিয়ে আছে, যেমনটা লুকিয়ে থাকে কিংবদন্তিদের গল্পে শেষ আলোর ঝলকানি।