বুধবার রাতের ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে লজ্জাজনক ৩–০ গোলের পরাজয়ের আগে যদি কেউ বলত লিভারপুল সংকটে নেই, এখন তা বলার আর অবকাশ নেই। একসময় সামান্য ছন্দপতন বলে মনে হওয়া বিষয়টি এখন রূপ নিয়েছে ভয়াবহ ধসে। শিরোপা দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি ইউরোপেও তাদের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। আর কারাবাও কাপ জয়ের স্বপ্নও উড়ে গেছে ধোঁয়ার মতো।
রাতে প্যালেস যেন ছিল অপ্রতিরোধ্য। মূল একাধিক খেলোয়াড়কে বিশ্রামে রেখেও অলিভার গ্লাসনারের দল দুর্বল লিভারপুলকে তাদের নিজেদের মাঠেই উড়িয়ে দিল ৩–০ গোলে। দুইটি দারুণ গোল করে ম্যাচের তারকা ছিলেন ইসমায়লা সার। আর শেষ দিকে ইয়রেমি পিনো যোগ করেন তৃতীয় গোলটি। এরই মধ্যে তরুণ আমারা নালো লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। যেন সবকিছুই লিভারপুলের বিপক্ষে যাচ্ছিল।
আসলে ম্যাচ শুরুর আগেই আশঙ্কার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, যখন আর্নে স্লটের শুরুর একাদশ প্রকাশিত হয়। অ্যানফিল্ডের নিস্তেজ পরিবেশে জয়ের মাধ্যমে একটু আলো ফেরাতে পারতেন তিনি। কিন্তু ডাচ কোচ সিদ্ধান্ত নিলেন ঘূর্ণন নীতির। বিশ্রাম দিলেন তার সব তারকাকে।
মোহাম্মদ সালাহ নেই, ভার্জিল ফন ডাইক নেই, আলেক্সান্ডার আইজাক নেই, ফ্লোরিয়ান ভার্টজ নেই, এমনকি হুগো একিতিকেও রাখেননি একাদশে! এই একাদশ নিয়েই নেমেছিল লিভারপুল, এবং ফলাফল যেন শুরুতেই লেখা ছিল ‘পরাজয়’।
স্লটের এমন অস্থির সিদ্ধান্ত এখন স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ক্লাবটি গভীর সংকটে রয়েছে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ সাত ম্যাচের মধ্যে ছয়টিতে হার। এই পরিসংখ্যান কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।
সত্যি বলতে, লিভারপুল এই মৌসুমে কোনো সময়ই নিজেদের মতো খেলতে পারেনি। কাগজে কলমে মৌসুমের শুরুটা ভালো মনে হলেও বোর্নমাউথ, নিউক্যাসল আর আর্সেনালের বিপক্ষে জয়গুলোও ছিল ভাগ্যের সহায়তায়।
বিচিত্রভাবে, লিভারপুলের এই অধোগতির সূচনা ঘটিয়েছিল সেই ক্রিস্টাল প্যালেসই। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সেলহার্স্ট পার্কে ২–১ গোলে জয় পায় গ্লাসনারের দল। এর কয়েক সপ্তাহ আগেই কমিউনিটি শিল্ডে পেনাল্টি শুটআউটে লিভারপুলকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল তারা।
তারপর থেকেই যেন হারই লিভারপুলের নিয়তি।
ইউরোপে গালাতাসারাই হারিয়েছে। এরপর চেলসি স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে কেড়ে নিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট। আন্তর্জাতিক বিরতির পর থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ব্রেন্টফোর্ড ও আবার প্যালেস; সবার কাছেই হেরেছে স্লটের দল। প্রতিটি ম্যাচে যেন অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
নতুন সাইনিংদের অভিযোজন না হওয়াকেও দায়ী করা হচ্ছে। ফ্লোরিয়ান ভার্টজ প্রত্যাশার ধারেকাছে নেই। আর নিউক্যাসল থেকে রেকর্ড মূল্যে আসা আলেক্সান্ডার আইজাক করেছেন মাত্র একটি গোল। অন্যদিকে, মোহাম্মদ সালাহ ও ভার্জিল ফন ডাইকের পারফরম্যান্সেও বয়সের ছাপ স্পষ্ট। তারা আর সেই আগের মতো ধারালো নন, যাদের হাত ধরে গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল লিভারপুল।
সব মিলিয়ে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি স্পষ্ট। পর্দার আড়ালে ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। একসময় অজেয় মনে হওয়া দলটি এখন দুর্বল ও ভঙ্গুর। তবু আপাতত ক্লাব ব্যবস্থাপনা স্লটের ওপর আস্থা রাখছে। তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে তারা আগ্রহী নয়। যদিও পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
তবুও ইতিহাস বলে, এমন নিশ্চিন্ত ভাব সব সময় টিকে না। ২০১৫ সালে চেলসির হোসে মরিনিয়োকেও লিগ জেতার কয়েক মাস পরই বিদায় নিতে হয়েছিল। শিরোপা জয় সব সময় চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না। এটা সবার জানা কথা।
এখন দায়িত্ব স্লটের দলের মনোবল ফেরানো, ভাঙা আত্মবিশ্বাস জোড়া লাগানো। জার্গেন ক্লপ যেখানে বিশেষ ছিলেন, তা-ই এখন প্রমাণ করার পালা ডাচ কোচের জন্য। কারণ পরাজয় শুধু কষ্টই দেয় না, কখনো কখনো তা হয় পতনের সূচনা।
শনিবার (০১ নভেম্বর) অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে মাঠে নামবে লিভারপুল। দেখা যাক, অ্যানফিল্ডের সেই ছাইচাপা আগুন আবার জ্বলে ওঠে কি না।