ক্যাম্পাস

যবিপ্রবিতে বাতাস হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পাঠদান, গবেষণা, অনলাইন ক্লাস ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে স্বাভাবিক আবহাওয়া বা সামান্য বাতাস হলেই ক্যাম্পাস এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে বন্ধের দিনে এ ভোগান্তি আরো চরম আকার ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধের দিনে একাডেমিক ভবন ও জেনারেল ল্যাবগুলোতে জেনারেটর সেবা চালু না থাকায় গবেষণা কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ে। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো ক্যাম্পাস অন্ধকারে ঢেকে যায়। এতে তাদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।

এ বিষয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ আসিফ ইসলাম বলেন, “গত ২-৩ বছরের তুলনায় এ বছর যবিপ্রবিতে লোডশেডিং উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রশাসন মাঝে মাঝে আগাম নোটিশ দিলেও বাস্তবে অনিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিশেষ করে রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ১–২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনা ও বিশ্রাম উভয়ই ব্যাহত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “গত ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলাকালে সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিস্মিত হন। আশ্চর্যের বিষয়, অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদ্যুৎ চলে গেলেও, শেষ মুহূর্তে হঠাৎ ফিরে আসে—যা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। অনুষ্ঠানটি জেনারেটরের সাহায্যে সম্পন্ন হলেও, আবাসিক হলগুলোতে তখনো বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।”

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. রাহিয়া ভূঁইয়া ইরা বলেন, “ক্লাস চলাকালে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে মনোযোগ ধরে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তীব্র গরমে শ্রেণিকক্ষ দ্রুত অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। ফলে পড়াশোনায় মনোসংযোগ ব্যাহত হয়।”

তিনি বলেন, “অনেকে শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এমনকি কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি শুধু শিক্ষার পরিবেশকেই বিঘ্নিত করছে না, বরং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ মূলত পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের হাতে। আমাদের নিজস্ব সাবস্টেশন থাকলেও বিদ্যুতের উৎস সেখান থেকেই আসে। ফলে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না।”

তিনি বলেন, “যেহেতু বিদ্যুতের লাইনগুলো গ্রামের মধ্য দিয়ে আসে, তাই সামান্য বাতাস বা গাছপালা পড়ে গেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সংযোগ ঠিক না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয় না।”

“সব ভবনে জেনারেটর নেই। যেসব ভবনে জেনারেটর আছে, সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা ব্যাকআপ দিয়ে থাকি,” যোগ করেন প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।